মাদারীপুর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে আনন্দ মিছিল ও কেক কাটাকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে ছয় পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়েছেন।
সদর উপজেলায় সরকারি নাজিমউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্যাম্পাসে আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত দফায় দফায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ ছাত্রলীগের সাতজনকে আটক করেছে।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্রলীগের ১৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা হলেন, ‘হাবিবুল্লাহ্ (১৮), সাদ তালুকদার (২১), মো. রাব্বি (২২), মো. ইমরান (১৮), মো. নাহিদ (৩৩), রোমান (২৫), ফরিদ সরদার (২২), ফিরোজ খান (৪৫), মো. তুষার (২২), মো. মনির (২৫), ইমরান হোসেন (১৯), শুভ (১৯) ও মো. ফয়সাল (১৮)। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের নেতা–কর্মী ও সদর উপজেলার বাসিন্দা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে খণ্ড খণ্ড আনন্দ মিছিল নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেনের সমর্থকেরা। এর কিছু সময় পরে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবির মাহমুদ তানভীরের সমর্থকেরা আলাদা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকেন। এতে প্রথমে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের সমর্থকেরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসের ভেতরেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় পুলিশের ৬ সদস্যসহ আহত হন অন্তত ৩৫ জন। তাঁদের উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর কলেজ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করায় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা অখিল সরকার বলেন, ছাত্রলীগের ৩৫ জন নেতা-কর্মী আহত অবস্থায় সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। আহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ। এর মধ্যে ১৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদ হাওলাদার বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগে কোনো দ্বন্দ্ব বা বিভাজন নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে কলেজ ক্যাম্পাসে জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আনন্দ মিছিল ও কেক কাটার আয়োজন করা হয়। এ সময় নামধারী ছাত্রনেতা ও শ্রমিকেরা কলেজ ক্যাম্পাসে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে আমাদের নেতা–কর্মী ও সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালান। হামলায় আমাদের কয়েকজন আহত হলে সাধারণ ছাত্রসহ জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলাকারীদের প্রতিহত করেন।’
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তানভীর মাহামুদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন ঘিরে আমাদের সমর্থকেরা শুক্রবার থেকেই কলেজে অনুষ্ঠান করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আমাদের অনুষ্ঠানকে পণ্ড করতে ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বায়েজিদের নেতৃত্বে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর পরিকল্পিত হামলা করেন। হামলায় আমাদের অর্ধশত নেতা–কর্মী আহত হন। আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বদরুল আলম মোল্লা বলেন, ‘একই সময় ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ আনন্দ মিছিল বের করলে দুই পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশের এএসআই সোহেল আহম্মেদসহ ছয়জন আহত হন। পরে ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রলীগের সাতজনকে আটক করা হয়েছে।’