কবি শেখ ফজলল করিমের ৮৩ তম মৃত্যু বাষিকীতে নেই কোন আয়োজন

Slider সাহিত্য ও সাংস্কৃতি


হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ ‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক- কে বলে তা বহুদুর- মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক -মানুষেতে সুরাসুর।’ অমর কবিতাটির লেখক কবি শেখ ফজলল করিম। বর্তমান বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত সকলেই ছোট বেলায় এই কবিতাটি নিশ্চিয় পড়েছেন।

এই সুফিসাধক কবি শেখ ফলল করিম লালমনিরহাটের কাকিনায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন ১৮৮৩ সালের ১৪ এপ্রিল। শনিবার ২৮ সেপ্টেম্বর কবির ৮৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী।মৃত্যুবাষিকীতে সরকারি বেসরকারী ভাবে কোন আয়োজন নেই।

কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে হয়নি কোন স্মরণ সভা অনুষ্ঠান।তার স্মরনে নুন্যতম দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠানের ছিলনা কোন আয়োজন। এমন কি কবির নামে প্রতিষ্টিত বিদ্যালয় ও কাকিনায় তার নামে প্রতিষ্ঠিত গণ গ্রন্থাগারে কোন আয়োজন নেই।

কবি শেখ ফজলল করিমের নাম স্মৃতি সংরক্ষণে সরকারী কোন উদ্যোগ নেই। পারিবারিক ভাবেও কবি শেখ ফজলল করিম এর কবরটি সংরক্ষণ করা হয়েছে।

কবি শেখ ফজলল করিম ১৯৩৬সালের ২৮সেপ্টেম্বর মৃত্যু বরণের আগে তার নিজের জন্য কবিতার লাইন লিখে যান।তার ইচ্ছা ছিলো তার কবরে লেখা থাকবে সেই কয়েকটি কবিতার চরণ-
আদ্র মহীতলে হেথা চির-নিদ্রাগত
ব্যথাতুর দীন কবি,অফুরন্ত সাধ;
ভূলে যাও তরুটি তার জনমের মত,

হয়তো সে করিয়াছে শত অপরাধ।

পান’ পদরেণুপূত এ শেষ ভবন,
হতে পারে তার ভাগ্যে সুখের নন্দন–।

কিন্তুু সরেজমিনে কবির জন্ম ভূমি কাকিনায়,কবি বাড়িতে গিয়ে তার সমাধিতে এ ধরনের কোন স্মৃতি চিন্হ দেখা যায়নি।

বাড়িটি ও তার ব্যবহ্নিত আসবাবপত্র সংরক্ষনের অভাবে ধংসের পথে । কাকিনারমত অজো পাড়াগায়ে নিজ বাড়িতে শাহারিয়া প্রিন্টিং ওয়ার্কস নামে ছাপা খানা স্থাপন করে ছিলেন। তার বৈচিত্রময় ৫৫টি গ্রন্থে ধর্ম, বর্ণ, নারী জাগরন, সামাজিক বৈষম্য ফুটে উঠেছে।

মুসলিম সুফি সাধক হিসেবে তার ছিল সুখ্যাতি। ছাপা খানাগ হতে বাংলায় বাসনা নামে দৈনিক পত্রিকা ভারত বর্ষে তিনি প্রথম প্রকাশ করে ছিলেন। প্রথম দিকে হাতে লিখে পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। পরে ছাপা অক্ষরে প্রকাশ হয়।

কবির অমূল্য এ স্মৃতি রক্ষায় নেই কোনো সরকারি উদ্যোগ। সরেজমিনে গেলে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় কবি শেখ ফজলল করিমের স্মৃতিবিজড়িত গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অতীত ঐতিহ্য হারাতে বসেছে বাড়িটি। অযত্ন আর অবহেলায় ধ্বংস হতে চলেছে নিজ গ্রামে কবির অবশিষ্ট স্মৃতিচিহ্ন।

বাড়িতে প্রবেশের পর দেখা যায়, কবির কবরের ঠিক সামনেই বিরাট এক কাঁচারি ঘর। প্রশস্ত বারান্দায় সৌখিন কাঠের কারুকাজ। কাঁচারি ঘরের চালজুড়ে মনোহরী ফুলের বাগান। নজরকাড়া এ বিশাল ঘরটিতেই কেটেছে কবির জীবন। ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, ঘরটির সাবেক কাঠামো ঠিক রেখে সম্প্রতি সামান্য সংস্কার করা হয়েছে।

তবে সামাান্য সংস্কার করলেও দরজা ও চৌকাঠের ভগ্নদশা এখনো রয়ে গেছে। সৌখিন কারুকাজ করা কাঠগুলো উইপোকার অত্যাচারে খসে খসে পড়ছে। ঘরের ভেতরে কাঠের দেয়ালজুড়ে কবির বেশ বড় দুটি ছবি টাঙানো। সংরক্ষণে রয়েছে কবির ব্যবহৃত একটি জীর্ণ চেয়ার, খাট ও একটি গ্রামোফোন।

ঘরটির এক কোণে একটি কাচের শোকেস। শোকেসের কাচগুলো ফেটে চৌচির। তার ভেতরে অযত্মে পড়ে আছে কবির ব্যবহৃত টুপি, দোয়াত-কলম ও পবিত্র ছোট কোরআন শরীফ।

এছাড়া ঘরের মেঝেতেও সিমেন্টের প্রলেপ উঠে ছোট ছোট অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বাড়ীর বাহিরে কিছুটা সংস্কার কাজ চোখে পড়ে। সাহিত্য চর্চার সুবিধার্থে স্থানীয় জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত কবি বাড়িতে ১৮৯৬ সালে করিমস আহমদিয়া লাইব্রেরি নামে একটি পাঠাগার স্থাপন করেছিলেন কবি।

এখন তার কোনো চিহ্নই অবশিষ্ট নেই। জীবদ্দশায় সাহিত্যকর্মে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন কবি শেখ ফজলল করিম। তিনি মোট ৫৫টি গ্রন্থ লিখেছিলেন কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে যার অনেকগুলোরই এখন আর হদিস মেলেনা। কবির বাড়িটি বর্তমানে রক্ষনাবেক্ষন করেন কবির নাতি ওয়াহিদুন্নবী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *