‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সম্মাননা পেলেন প্রধানমন্ত্রী

Slider জাতীয় সারাবিশ্ব


নিউ ইয়র্ক: দেশের তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার মিললো সেই কাজের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আলোকোজ্জ্বল পরিবেশে প্রধানমন্ত্রীকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সম্মাননায় ভূষিত করে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল- ইউনিসেফ।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের ইউনিসেফ ভবনে ‘অ্যান ইভনিং টু অনার হার এক্সিলেন্সি প্রাইম মিনিস্টার শেখ হাসিনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর।

ইউনিসেফকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা এই সন্মাননা বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে দেশের ও বিশ্বের সব শিশুকে উৎসর্গ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “লক্ষ লক্ষ তরুণ তাদের দক্ষতা নিয়ে আমাদের জীবন ও জীবিকা নির্বিঘ্ন করে চলেছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই সম্মান আমার একার নয়, এটি বাংলাদেশের। কারণ বাংলাদেশের জনগণ আমাকে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করেছেন। এ কারণেই আমি তাদের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি।”

দেশের যেকোনো ক্রান্তিকালে তরুণদের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা জ্ঞানসম্পন্ন একটি তরুণ প্রজন্ম গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সহায়তা করতে পারবে।”

প্রতি বছর ২০ লাখ যুবক বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা দক্ষতা বিকাশের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। যুবকদের যথাযথ জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।”

স্থানীয় ও বিশ্ব বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কারিগরি, বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার নির্বাচিত ১০০টি উপজেলায় ১০০টি কারিগরি স্কুল ও কলেজ স্থাপন করছে। ধীরে ধীরে দেশের অন্যান্য উপজেলাতেও এ জাতীয় স্কুল ও কলেজ হবে।

বাংলাদেশের উন্নয়নে, বিশেষ করে শিক্ষার পাশাপাশি শিশু ও নারীদের উন্নয়নে সহায়তার জন্য ইউনিসেফকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে যে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রেই নারীরা অনেক এগিয়ে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে দেশে শিক্ষিতের হার এখন ৭৩ শতাংশ। এই হার শতভাগে নিয়ে যাওয়াই তাঁর সরকারের লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পরে সেখানে উপস্থিত প্রবাসীদের উদ্দেশে বাংলায় কিছু কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা যে স্কুলে পড়েছেন, প্রত্যেকে যদি নিজের সেই স্কুলকে সহায়তা করেন, নিয়মিত খোঁজ নেন, তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। কোন শিশুই যেন স্কুলের বাইরে না থাকে, এটা নিশ্চিত করতে হবে।

ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক তরুণদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অবদানের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতি পাঁচজনের একজনের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। আর এক চতুর্থাংশের বয়স ১৪ বছরের নিচে। এই তরুণরা ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হচ্ছে, যাতে পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু করতে পারে। তাদের জন্য শিক্ষা, কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হচ্ছে তার প্রশংসা করেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক। পাশাপাশি মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তকেও সাধুবাদ জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে ইউনিসেফের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, শিশু মৃত্যুর হার কমাতে, শিক্ষার হার বাড়াতে এবং লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ‘দুর্দান্ত অগ্রগতি’ অর্জন করেছে। তিনি বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৭ ভাগই এখন তরুণ। ফলে এক অর্থে বলা যায়, বাংলাদেশ এখন তরুণদের দেশ।

সাকিব আল হাসান বলেন, “দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।”

বক্তব্য শেষ করে চলে আসবার সময় প্রধানমন্ত্রী সাকিব আল হাসানকে ক্রিকেট নিয়ে কিছু বলতে বলেন। উত্তরে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের খুবই শক্তিশালী দল। এখন কিছুটা খারাপ সময় যাচ্ছে। তবে সামনে দুটি বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ ভালো খেলবে, এমন প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

সবশেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। এছাড়া সমাজে সমতা বিধান, নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলেন তিনি। আর সবক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, তার প্রশংসা করেন মন্ত্রী। আর প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান জানানোয়, ইউনিসেফকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

দেশের উন্নয়নে এনজিও ও বেসরকারি উদ্যোগেও প্রশংসা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, এমন অনুষ্ঠানে সাকিব আল হাসানের উপস্থিতি শত শত তরুণকে ভালো কাজে উৎসাহিত করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *