ঢাকা: অবৈধ ক্যাসিনো ও জুয়া থেকে লাভবান হওয়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তালিকা হচ্ছে। ক্যাসিনো বন্ধ অভিযানে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এই তালিকা করা হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, তদন্তকালে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যদি পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁকে মামলার আসামি করা হবে। নইলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্য এসব অবৈধ লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রমাণ খুব কমই থাকে। প্রমাণ না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে যায়।
ক্যাসিনো মামলা তদন্তের জন্য একটি দল গঠন করা হয়েছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ক্যাসিনোসহ অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দুই সদস্যকে গতকাল বুধবার তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে। এঁদের একজন পুলিশ পরিদর্শক। আরেকজন সহকারী উপপরিদর্শক। একজন গোয়েন্দা পুলিশের ‘ক্যাশিয়ার’ নামে পরিচিত ছিলেন।
১৮ সেপ্টেম্বর থেকে জুয়া-ক্যাসিনো বন্ধে অভিযান শুরু হয়। এই আট দিনে ২১টি ক্লাব,৪টি বার, যুবলীগ নেতার ৩টি বাসা ও ১টি দপ্তরে অভিযান চালানো হয়েছে।
ঢাকায় চারটি ক্যাসিনো, যুবলীগ নেতার বাসা ও কার্যালয়ে অভিযানের ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটটি মামলা হয়েছে। মাদক, অস্ত্র ও মানি লন্ডারিং আইনে এসব মামলা হয়। গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা-পুলিশ এসব মামলা তদন্ত করছে।
অস্ত্র আইনের মামলাগুলো তদন্তের জন্য পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি দিয়েছে র্যাব। এর মধ্যে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বাসা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের মামলা তদন্তের দায়িত্ব র্যাবকে দেওয়া হয়েছে।
আর মানি লন্ডারিং আইনের মামলা তফসিল অনুসারে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করবে বলে জানা গেছে।
পুলিশেরই একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, ক্যাসিনোগুলো চলছিল রাজনীতিক ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত পর্যায়ে তাঁরা জানতে পারেন, অবৈধ ক্যাসিনো চলত পুলিশের পাহারায়। শুধু পুলিশই নয়, গোয়েন্দা সংস্থার অনেক সদস্যও এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
ঢাকা মোহামেডান ক্লাবের আয়-ব্যয়ের এক হিসাবে দেখা গেছে, অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর সুযোগ করে দিয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পেত পুলিশ।
অবশ্য এভাবে টাকা লেনদেনের কথা অস্বীকার করেছেন মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন।
শুধু তা-ই নয়, ক্যাসিনোর অস্তিত্ব সম্পর্কে ২০১৭ সালের জুনেই পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারে। পরের বছরের মার্চে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। তারপরও ক্যাসিনোগুলো বন্ধে কোনো উদ্যোগ নেয়নি পুলিশ।
মহানগর পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, উচ্চপর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তদন্তকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্যের নাম পাওয়া যাবে, তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করা হবে। সেই তালিকা সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে সবুজ সংকেত আসার পর এসব সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, তদন্তকালে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যদি পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁকে মামলার আসামি করা হবে। নইলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্য এসব অবৈধ লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রমাণ খুব কমই থাকে। প্রমাণ না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে যায়।
মামলা-জিজ্ঞাসাবাদ
১৪ সেপ্টেম্বর ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা ও কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সভাপতি শফিকুল আলমের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হয়েছে। যুবলীগ নেতা এস এম গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে র্যাব।
মামলাগুলো তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। যুবলীগের নেতা খালেদ মাহমুদ, শামীম ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা শফিকুল আলমকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। তদন্তের ব্যাপারে ডিবির কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।