মসজিদে মৌ-চাক। একটি দু’টি নয়। গুনে গুনে ৩০টি! অবাক লাগছে? কিন্তু এটিই সত্যি। না, মৌমাছির চাষ নয়। কিশোরগঞ্জের একটি মসজিদকে ঘিরে প্রাকৃতিক ভাবেই গড়ে উঠেছে অন্যরকম এক মৌমাছির খামার! মসজিদের দেয়াল, কার্ণিস, সানসেট, মিনার কোথায় নেই মৌ-চাক! ছোট্ট মসজিদে একের পর চাক বাঁধতে, যেনো কিছুটা অসুবিধাই হচ্ছে মৌমাছিদের। তাইতো ওরা জায়গা খোঁজে নেয় মসজিদ আঙ্গিনার কয়েকটি গাছেও। গত কয়েক বছর ধরেই চলছে মৌমাছিদের এমন কা-কারখানা! তবে এতে বিরক্ত নয় মসজিদ কর্তৃপক্ষ। বরং তারা খুশি। উড়ে এসে জুড়ে বসা মৌমাছিরা শুধু ভন ভন আওয়াজ করেই মুসলি¬দের বিরক্ত করেনা। তারা কামড়ে দেয়না কাউকে। বরং উপহার দিচ্ছে সুস্বাধু মধু। এসব মৌচাক থেকে প্রতি মওসুমে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধু আহরিত হচ্ছে। সমৃদ্ধ হচ্ছে মসজিদের ফান্ড। খুশি এলাকাবাসীও।
কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা সদরের সহিলাটি জামে মসজিদে মৌমাছিরা ব্যতিক্রমি এ মওসুমি আবাস গড়ে তুলেছে। এলাকাবাসী জানায়, তাড়াইল উপজেলা সরিষার জন্য বিখ্যাত। তাড়াইল যাওয়ার পথে চোখে পড়ে দিড়ন্ত বিস্মৃত হলদের সমারোহ। প্রতি সরিষা মওসুমে সহিলাটি জামে মসজিদে ছুটে আসে কোটি কোটি মওমাছি। সহিলাটি জামে মসজিদ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মসজিদের দেয়াল, সানসেট, কার্ণিস, মিনার ও মসজিদ আঙ্গিনার বিভিন্ন গাছে তারা মধুর চাক তৈরি করে। এখন সরিষার মওসুম। তাই প্রতিবছরের মতো এবারও মসজিদ প্রাঙ্গন দখল করে নিয়েছে ঝাঁকে ঝাকেঁ মৌমাছি। মুলি¬রা যেখানে নামাজ পড়ছেন, তার কয়েক গজের মধ্যেই অন্তত ১০টি মৌচাক!
মসজিদ কর্তৃপক্ষ আমাদের কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মো. এস. হোসেন আকাশকে জানায়, কয়েক বছর ধরে এখানে মৌমাছিরা চাক বানায়। তারা মসজিদের মুসলি¬দের কোন ক্ষতি করেনা। মুসলি¬রা মৌমাছির আবাসন ও মধু আহরণ নির্বিঘœ করতে মসজিদের বাইরের দিকে বৈদ্যুতিক বাতি নিভিয়ে রাখেন। আশপাশের শিশুরাও মৌচাকে ঢিল দেয়া বা তাদের উৎপাত করা থেকে বিরত থাকে। সহিলাটি জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিন জানান, ৬ বছর আগে ২০০৮ সালে মসজিদের দেয়ালে প্রথম ২টি মৌচাক দেখা যায়। সেবার চাক দু’টি থেকে ৩০ কেজি মধু সংগ্রহ করে মসজিদ কমিটি। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো পরের মওসুমে মসজিদে ৫টি চাক বাধে মৌমাছি। এর পর থেকে প্রতি বছর মৌচাকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এবার ৩০ টি চাক হয়েছে। মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সহিলাটি গ্রামের বাসিন্দা সভাপতি মো. নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, প্রতি বছর চাক ভেঙ্গে মধু সংগ্রহ করা হলেও মৌমাছিরা মসজিদেই ফিরে আসে। তাদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মসজিদ কমিটি ও সাধারণ মুসলি¬রা। তিনি আরও জানান, প্রতি বছর মৌচাক থেকে পাওয়া মধু বিক্রি করে ৩০-৩৫ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এবার ৫০ হাজার টাকার মধু বিক্রি করা যাবে বলে আশা করছেন তিনি। প্রতিদিন আশপাশের মানুষ মৌমাছির চাক দেখতে মসজিদে আসে।
এলাকাবাসীর ধারনা, কাছেই সরিষা ক্ষেত থাকায় মৌমাছিরা এখানে চাক বাধে। কিন্তু, প্রতিবার একই মসজিদ আঙ্গিনাকে চাক বাধার জন্য কেন বেছে নিয়েছে, কিংবা বার বার ওসব চাক ভেঙ্গে মধু সংগ্রহ করার পরও মৌমাছিরা কেন সেখানে ফিরে আসে-সেটি এলাকাবাসীর কাছে এখনও বিষ্ময়।