২০০ টাকার ‘লোভ’ থেকে জাতীয় পুরস্কার

Slider বাংলার সুখবর

ঢাকা: ০০ বছরের যুবক নবদ্বীপ মল্লিক! বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায়। একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। সেটি বন্ধ হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়েন। হাতে টাকাকড়ি নেই। একদিন শুনলেন, উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে একটি প্রশিক্ষণ হবে। সেখানে গেলে ২০০ টাকা পাওয়া যাবে। টাকাটার ‘লোভেই’ সেই প্রশিক্ষণে যোগ দেন নবদ্বীপ। সেখান থেকেই তাঁর দিনবদলের শুরু। নবদ্বীপ এখন স্বাবলম্বী। পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও।

সম্প্রতি ডুমুরিয়ার বরাতিয়া গ্রামে নবদ্বীপ মল্লিকের কৃষি খামারে বসে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বললেন, কৃষক হওয়ার কথা ভাবেননি কখনো। ২০০ টাকার জন্যই সেদিন (বছর পাঁচেক আগে) প্রশিক্ষণে গিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে তাঁর মনে হলো, চেষ্টা করলে তিনিও কিছু করতে পারবেন। তারপর তিনি তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন কুলবাগান।

এখন নবদ্বীপ নিজের ও বর্গা নেওয়া মোট ছয় বিঘা জমিতে মৌসুমি সবজির আবাদ করেন। চার বিঘা জমিতে আছে কলা ও পেয়ারার বাগান। আছে একটি গরুর খামার। সেখানে ১২টি গরু আছে। গড়ে ৩০ কেজি দুধ পান। করেছেন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, সেখান থেকে মেটে জ্বালানি চাহিদা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তিনি নিজ হাতে বানানো ভার্মিপোস্ট বা জৈব সার ব্যবহার করেন। সবজি উৎপাদনে বিশেষ অবদানের জন্য গত বছর তিনি জাতীয় পুরস্কার (তৃতীয়) পেয়েছেন।

এসবের পাশাপাশি নবদ্বীপ এখন পেঁপের গুটি কলম করে চারা উৎপাদন করেন। বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেছেন খুলনার বিখ্যাত চুইঝালের চারা (কলম) উৎপাদন।

নবদ্বীপ প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন ২০০ টাকার লোভে পড়েছিলেন বলেই আজ ভাল আছেন। মা-বাবা, স্ত্রী–সন্তান, আরেক ভাই-ভাবিকে নিয়ে যৌথ পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে। তিনি ও তাঁর ভাই প্রদীপ মল্লিক খামারে কাজ করেন। প্রতিদিন দুজন শ্রমিক কাজ করেন খামারে।

চুইঝাল নার্সারি

খুলনা অঞ্চলের চুইঝাল বিখ্যাত। লতাজাতীয় এই গাছ এখন কিছু কিছু জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। গত বছর থেকে চুই নার্সারি করছেন নবদ্বীপ। সেখান থেকেও তাঁর ভাল আয় আসে।

নবদ্বীপ জানান, কয়েক বছর আগে তিনি একটি প্রশিক্ষণে গিয়ে চুইঝালের বাণিজ্যিক সম্ভাবনার বিষয়ে ধারণা পান। এরপর চুইয়ের চারা কিনতে গিয়ে দেখেন অনেক দাম। তখন তিনি নিজেই কলমের মাধ্যমে চুইয়ের চারা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তাঁর মাথায় আসে চুই নার্সারি করার চিন্তা। এখন তাঁর চুই নার্সারি আছে। গত বছর তিনি ৮ হাজার চুইয়ের চারা বিক্রি করেছেন। প্রতিটি চারার দাম ৩০ টাকা।

পেঁপের গুটি কলম

চলতি বছর পেঁপের গুটি কলম করে সাফল্য পেয়েছেন নবদ্বীপ। ৮০টি কলম করে একটি বাগান করেছেন পরীক্ষামূলকভাবে। দুই মাস হয়েছে বাগানের বয়স। এখন ৫০টির মতো কলমের পেঁপে গাছ বেঁচে আছে এবং বেড়ে উঠছে। নবদ্বীপ আশা করছেন, স্বাভাবিক মাতৃগাছের মতোই এসব কলমে ভালো ফলন তিনি পাবেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাদ্দেক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কৃষক নবদ্বীপ মল্লিক গত বছর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁকে উৎসাহ এবং সহায়তা দিতে উপজেলা কৃষি কার্যালয় তাঁর সঙ্গে আছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি নবদ্বীপ পেঁপের গুটি কলম করে সফলতা পেয়েছেন। কলমের গাছে মাতৃগাছের সব বৈশিষ্ট্য বজায় থাকছে। তাঁর এই সাফল্য একটি ভালো অর্জন, যা স্থানীয় কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *