হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধি:উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের বর্ষনে তিস্তার পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফলে শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা আবারো ফিরে পেলো চিরচেনা আপন রুপ।
মঙ্গলবার(১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটর।
যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০সেঃমি) বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে গত সপ্তাহ জুড়ে বিপদসীমার ৩৫/৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও সোমবার( ১৬ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে হঠাৎ বাড়তে থাকে তিস্তার পানি প্রবাহ।
যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে শুকিয়ে যাওয়া মৃত প্রায় তিস্তা আবারো ফুলে ফেঁপে উঠে ফিরে পেয়েছে তার চিরচেনা রুপ।
হেঁটে পাড়ি দেয়া তিস্তায় চলতে শুরু করেছে নৌকা। হাকডাক বেড়েছে মাঝি মাল্লাদের। কর্মব্যস্থতা দেখা দিয়েছে তিস্তাপাড়ের জেলে পরিবার গুলোর মাঝেও।
এ দিকে হঠাৎ তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি দেখে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ের মানুষ বন্যার আশংকা করলেও বন্যা সতর্কীকরন কেন্দ্রের দাবি তিস্তায় নতুন করে বন্যার আশংকা নেই।
বৃষ্টির কারনে উজানের ঢেউ ও এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের ফলে পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেলেও বন্যার আশংকা নেই। বৃষ্টি কমে গেলেই তিস্তার পানি প্রবাহ কমতে শুরু করবে। তবে হঠাৎ তিস্তায় পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করা কৃষকরা ক্ষতি মুখে পড়েছেন। তাদেরকে পুনরায় জমি কর্ষন দিয়ে ফসল বুনতে হবে।
আগাম সবজি চাষরা কৃষকরা সব থেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাদের সবজি ক্ষেত ডুবে গিয়ে ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে বলেও দাবি করেন কৃষকরা।
আদিতমারী উপজেলার গোবর্দ্ধন পাসাইটারী তিস্তা চরাঞ্চলের কৃষক মানিক মিয়া জানান, নদীর কিনাড়ে জেগে উঠা ৩ দোন (২৭ শতাংশে দোন) জমিতে আগাম জাতের আমন ধান রোপন করেন। সেই আমন ক্ষেতে কিছু অংশ নদী ভাঙ্গনে বিলিন হলেও বাকী অংশ পানিতে ডুবে আছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে ধান ক্ষেতের উপকার হবে। কিন্তু বেশি সময় ডুবে থাকলে ধানক্ষেত পচে নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
এ কারনেই তিস্তাপাড়ের কৃষকরা আতংকিত বলেও দাবি করেন তিনি।
হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের চর হলদিবাড়ি গ্রামের আব্দুর রহমান ও আনেচ আলী জানান, তিস্তা শুকিয়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের জমিতে তামাকসহ বিভিন্ন সবজি চাষের জন্য জমি তৈরী করে রেখেছেন তারা। কয়েক দিনের বৃষ্টির কারনে তারা সবজি বীজ বপন করেননি।
এরই মধ্যে পানি বৃদ্ধি পেয়ে জমি ডুবে গেছে। তাই তাদের ব্যস্থতাও কমে গেছে। পানি নেমে গেলে আবারো জমি কর্ষন দিয়ে সবজি বীজ বপন করা হবে বলেও জানান তারা।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ সোমবার রাত থেকে বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার(১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আপাতত সবগুলো জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে।
তবে রাতে আবারো পানি প্রবাহ কমে যেতে পারে বলেও জানান তিনি।