কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলামকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগের একাংশের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, এই দুই নেতা সদ্য পদ হারানো ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রব্বানীর কাছ থেকে টাকা দিয়ে নেতৃত্বে এসেছিলেন।
আজ রোববার সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ সময় তাঁরা ‘৪০ লাখের কমিটি—মানি না, মানব না’, ‘পকেট কমিটি—মানি না, মানব না’, ‘টাকায় কেনা কমিটি—মানি না, মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করেন। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তাঁরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে সভাপতি রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে—এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি আগেও বলেছি, এখনো বলছি—আমার নামে যদি কেউ কোনো অপকর্ম প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে নিজ থেকেই পদত্যাগ করব। কোনো প্রেশার লাগবে না।’ সাধারণ সম্পাদকের অডিও ফাঁস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা তাঁর (রাকিবুল) নয় বলে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। বিষয়টির এখনো মীমাংসা হয়নি। যদি সেটা ঘটে থাকে, সেটা পারসোনাল ব্যাপার। সেখানে পুরো কমিটিকে বিতর্কিত করা কেন হচ্ছে?’
সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সূত্র জানায়, গত ১৪ জুলাই সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে। সভাপতি হিসেবে রবিউল ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাকিবুলকে ক্যাম্পাসের একাংশের নেতা-কর্মীরা মেনে নেয়নি। কয়েক দিন আগে সাধারণ সম্পাদক রাকিবুলের মোবাইল ফোনের কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়। তাতে জানা যায়, কমিটির পদ পেতে বিপুল অর্থ খরচ হয়েছে। এরপর থেকেই পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা ফুসে ওঠে। গতকাল শনিবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দুই নেতা পদ হারানোর পর বিক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।
আজ রোববার সকালে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাংসদ মাহবুবউল আলম হানিফ ঢাকা থেকে যশোর হয়ে কুষ্টিয়ায় যাচ্ছিলেন। তাঁকে অভিনন্দন জানাতে সকাল ১০টার দিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। হানিফকে বিদায় জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা।
মিছিলের নেতৃত্ব দেন ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল সিদ্দিকী, মিজানুর রহমান, তৌকির মাহফুজ ও শিশির ইসলাম। মিছিল থেকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিভিন্ন স্লোগান দেন নেতা-কর্মীরা।
ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, ‘রাকিবুল মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নেতা হয়েছেন, যার অডিও ফাঁস হয়েছে। যেহেতু কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা পদ হারিয়েছেন, সেহেতু অর্থের লেনদেনের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাদেরও পদে থাকার কোনো অধিকার নেই।’ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত নতুন সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের প্রতি এই কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি করার আহ্বান জানান তিনি।