কারবালায় শহীদদের আত্মত্যাগ বর্বরতার বিরুদ্ধে ঐক্যের প্রেরনা

Slider সিলেট


হাফিজুল ইসলাম লস্কর: মহিমান্নিত ১০ই মহররম তথা পবিত্র আশুরা ‘মুসলিম উম্মাহ্র নিকট হৃদয় বিদারক ঐতিহাসিক দিবস। আরব ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় রচিত হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীতে ইরাকের ফোরাত নদী আর কারবালার প্রাঙ্গনে। পিশাচ নরঘাতক সীমারের নারকীয় তান্ডবে সেদিন পৃথিবীর আকাশ বাতাস কেপে উঠেছিল। শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদির নেতৃত্বে ইমাম হুসাইন এবং তাঁর ৭২ জন সঙ্গীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পিশাচ শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদি নিজ হাতে ইমাম হুসাইন এর কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে নির্মমভাবে শহীদ (হত্যা) করে।

হিজরী ৬০ সনে এজিদ বিন মুয়াবিয়া পিতার মৃত্যুর পর নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসাবে ঘোষণা করে। তার সম্পর্কে বলা হয় যে সে মদ্যপানকে বৈধ মনে করতো। শাসক হিসাবে সে ছিল স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী। ইমাম হুসাইন এজিদের আনুগত্য করতে অস্বীকৃত হন এবং ইসলামের সংস্কারের লক্ষ্যে মদীনা ছেড়ে মক্কা চলে আসেন। এবং কুফাবাসী দাওয়াতে মক্কা থেকে তিনি কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কারবালার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এ সময় উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে। কয়েক ঘণ্টা পর শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদির নেতৃত্বে আরো বহু নতুন সৈন্য এসে তার সাথে যোগ দেয়৷ কারবালায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধ ছিল অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই। এই অসম যুদ্ধে ইমাম হুসাইন এবং তাঁর ৭২ জন সঙ্গী শাহাদৎ বরণ করেন। শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদি নিজে কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে ইমাম হুসাইনকে হত্যা করে। সেদিন ছিল হিজরী ৬১ সনের ১০ মুহররম।

এছাড়াও ১০ই মহররম ইসলামের ইতিহাসে বিভিন্ন কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। বলা হয়, এই দিনে আসমান ও যমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম -কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এই দিনে আল্লাহ নবীদেরকে স্ব স্ব শত্রুর হাত থেকে আশ্রয় প্রদান করেছেন। এই দিন নবী মুসা-এর শত্রু ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে দেয়া হয়। নূহ -এর কিস্তি ঝড়ের কবল হতে রক্ষা পেয়েছিলো এবং তিনি জুডি পর্বতশৃংগে নোঙ্গর ফেলেছিলেন। এই দিনে দাউদ-এর তাওবা কবুল হয়েছিলো, নমরূদের অগ্নিকুণ্ড থেকে ইব্রাহীম উদ্ধার পেয়েছিলেন; আইয়ুব দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত ও সুস্থতা লাভ করেছিলেন; এদিনে আল্লাহ তা’আলা ঈসা -কে ঊর্ধ্বাকাশে উঠিয়ে নিয়েছেন। আবার, প্রচলিত আছে যে এই তারিখেই কেয়ামত সংঘটিত হবে; যদিও এই বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ও খলিফায়ে রাশেদিনের ওফাতের পর মুসলিম রাষ্ট্রে লোভ ও হিংসার বশবর্তীতার কারণে সপ্তদশ শতাব্দীতে ইরাকের ফোরাত নদী আর কারবালার প্রাঙ্গনে করুণ দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। যেখানে শহীদ হয়েছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.)সহ অনেক সাহাবী। শহীদগণের জীবনোৎসর্গ পৃথিবীর সকল মুসলমান তথা বিশ্ববাসীকে আজও অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে উৎসাহিত করছে। আসুন আমরা শোকাবহ আশুরাই কারবালাসহ সকল শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনা; আশুরার প্রকৃত শিক্ষা বাস্তব জীবনে ধারণ এবং পবিত্র আল কোরআন ও সুন্নাহ্র আলোকে আদর্শ জীবন গড়ায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *