ঢাকা: সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন উড়োজাহাজের এক নারী ক্রু। তাঁর নাম রোকেয়া শেখ মৌসুমী (২৫)।
পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জবানবন্দি রেকর্ড শেষে উড়োজাহাজ ক্রু রোকেয়াকে সোমবার কারাগারে পাঠিয়েছেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাড়ে নয় কেজি সোনাসহ গ্রেপ্তার উড়োজাহাজের ক্রু রোকেয়া সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
পুলিশ বলছে, নারী ক্রু রোকেয়াকে ৫ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাঁকে আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে বিমানবন্দর থানা-পুলিশ। আদালত সে দিন রোকেয়াকে দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরে আযম মিয়া সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, সাড়ে নয় কেজি সোনাসহ গ্রেপ্তার উড়োজাহাজের ক্রু রোকেয়াকে দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সোনা আনার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
৫ সেপ্টেম্বর বেসরকারি একটি উড়োজাহাজ ওমানের মাসকাট থেকে বেলা ১১টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে। ফ্লাইটটির নারী ক্রু রোকেয়া অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের বহিরাঙ্গন এলাকা দিয়ে গাড়িতে উঠছিলেন। এ সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এ ঘটনায় এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন।
মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, আগে থেকে গোপন সংবাদ ছিল, মাসকট থেকে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী একটা উড়োজাহাজের একজন ক্রু সোনার বার নিয়ে আসছেন। তখন বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। দুপুর ১২টার দিকে উড়োজাহাজের ক্রু রোকেয়ার গতিবিধি সন্দেহজনক হয়। তাঁর কাছে সোনার বার আছে কি না তা জানতে চাওয়া হয়। প্রথমে সোনার বার থাকার কথা সরাসরি অস্বীকার করেন রোকেয়া। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় নারী পুলিশ কনস্টেবল দিয়ে তাঁর দেহ তল্লাশি করা হয়। তখন রোকেয়ার পরিহিত ইউনিফর্মের ভেতর থেকে ৭২টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া আরও ছয়টি সোনার বার তাঁর কাছে পাওয়া যায়। তাঁর কাছ থেকে সর্বমোট ৮২টি সোনার বার জব্দ করেছে পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় রোকেয়া জানান, একই উড়োজাহাজের যাত্রী মোহাম্মদ সোহেল খাঁর কাছ থেকে ৭৮টি সোনার বার সংগ্রহ করেন তিনি। সোনা চোরাচালানের ওই চক্রের সঙ্গে আছেন লাকী (৩৯), নেছার (৩৯) ও আসাদ বাপ্পী (৩৫)। তাঁরা পলাতক রয়েছেন।
মামলার বাদী এসআই হেলাল উদ্দিন বলেন, উড়োজাহাজের ক্রু রোকেয়া স্বীকার করেছিলেন, সাড়ে নয় কেজি সোনাসহ গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আরও দুবার তিনি সোনা আনেন। চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে সোনা চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত।
বিমানবন্দর থানা-পুলিশ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, উড়োজাহাজের ক্রু রোকেয়ার কাছ থেকে যে সাড়ে নয় কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে, তার বাজারমূল্য ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। আসামি রোকেয়া সোনা চোরাচালান চক্রের সক্রিয় সদস্য। তাঁর পাসপোর্ট, ব্যবহৃত মোবাইল, একটি জামা, ওমানের গালফ গোল্ড নামের জুয়েলারি দোকানের দুটি মেমো জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে উড়োজাহাজ ক্রু রোকেয়ার আইনজীবী আদালতের কাছে দাবি করেছেন, এই মামলা হয়রানিমূলক। সোনা চোরাচালানের সঙ্গে তিনি জড়িত নন।