ডেস্ক: ওনাকে ওঠাও। ওনি মাটিতে শুয়ে আছো কেন। ওনাকে মাটি থেকে উঠাও। মাটি থেকে তোলো। আমি ওনার পাশে শুয়ে থাকতে চাই, ওনি যদি না আসে তাহলে আমাকেও ওনার পায়ে শুয়ে রাখো। এসব কথা বলতে বলতে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকেন সাবেক ফাস্ট লেডি জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপ নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি। কাঁদতে থাকা রওশন এরশাদকে পাশে থাকা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা সান্তনা দিতে গিয়ে নিজেও কেঁদে উঠেন।
শনিবার বেলা আড়াইটায় জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিরোধী দলীয় নেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারতের সময় এই দৃশ্য দেখে নিরবে কান্নার পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো সবার চোখ থেকে। মরহুম এরশাদের চেহলাম উপলক্ষে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে রংপুর জাতীয় পার্টি। চেহলাম উপলক্ষে পল্লী নিবাসসহ নগরী এবং সদর উপজেলার ১৯ টি পয়েন্টে চেহলামের আয়োজন করা হয়।
বিরোধী দলীয় উপ নেতা রওশন এরশাদ বেলা আড়াইটায় হেলিকপ্টার যোগে রংপুর এসে এরশাদের কবর জিয়ারত করে দোয়া মোনাজাত করেন। এরপর তিনি এরশাদের স্মৃতি বিজরিত পল্লীনিবাসে যান। এরশাদের মৃত্যুর পর প্রথম তিনি রংপুর আসলেন। এর আগে সকাল থেকে পল্লী নিবাসে চলতে থাকে কোরআন তেলাওয়াত ও চেহলামের তবারক রান্নার কাজ। বাদ জোহর দোয়া মাহফিলের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য রংপুর মহানগর সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলা সভাপতি এসএম ফখর উজ-জামান জাহাঙ্গীর, নারায়গঞ্জের এমপি সেলিম ওসমান, লিয়াতক হোসেন খোকা এমপি প্রমুখ।
পরে এরশাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মোনাজাতে অংশ নেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা।
রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জানান, সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের পারিবারিক বাবুর্চি মিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ৪২ জন বাবুর্চি ও ১১০ জন সহকারী শুক্রবার দিবাগত গভীর রাত থেকে তবারক হিসেবে কাচ্চি বিরিয়ানি রান্নার কাজ করছেন। সকাল থেকেই ট্রাকে করে ১২ পাতিল কাচ্চি বিরিয়ানি সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলার নির্ধারিত ১৯ টি স্পটে পাঠানো হয়। বাদ জোহর দোয়া মাহফিল শেষে স্পটগুলোতে একসাথে তবারক বিতরণ শুরু হয়। এছাড়াও পল্লী নিবাসে এরশাদের মাজার প্রাঙ্গণসহ প্রতিটি স্পটে চলছে কোরআন তেলাওয়াত। এরমধ্যে পল্লী নিবাসে দলীয় এবং রাষ্ট্রীয় ভিআইপি অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের ভিআইপি নেতৃবৃন্দ ছাড়াও রংপুর বিভাগীয় কমিশনার তরিকুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্রাচার্য, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল আলীম, ডিসি আসিব আহসান, পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকারসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
মোস্তফা আরো বলেন, ৩ টন গরু, হাফ টন খাসি এবং সাড়ে ৩ টন চালের কাচ্চিবিরিয়ানি করা হয় তবারকের জন্য। প্রায় ৩০ হাজার মানুষ তবারক গ্রহণে অংশ নেন। বিকেল পর্যন্ত তবারক বিতরণ করা হয়। তিনি চেহলামে অংশগ্রহনকারীদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা নয়া দিগন্তকে জানান, সারাদেশে বাদ জোহর জাতীয় পার্টির সকল মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড শাখায় সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চেহলাম ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মূল কর্মসূচি পালিত হয় এরশাদের পবিত্র মাজার প্রাঙ্গনে।
প্রসঙ্গত: গত ১৪ জুলাই ঢাকার সিএমএইচ এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৬ জুলাই ব্যাপক বিক্ষোভ করে তাকে রংপুর পল্লীনিবাসের লিচুতলায় সমাহিত করা হয়। ২৩ আগস্ট তার মুত্যুর ৪০ দিন ছিল। সেদিনই তার চেহলাম অনুষ্ঠানের আয়োজনের সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু সেদিন হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি পুজা থাকায় তারিখ পরিবর্তন করে ৩১ আগস্ট করা হয়।