চট্টগ্রাম:চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় তাজা ইলিশ কিনতে সমুদ্রের উপকূলবর্তী এলাকার ঘাটগুলোয় ভিড় করছেন লোকজন। ক্ষতিকর উপাদান ও বরফ ছাড়া ঘাটে জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনতে পেরে একদিকে খুশি ক্রেতারা; অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়া সরাসরি ইলিশ বিক্রি করতে পারায় লাভবান হচ্ছেন জেলেরাও। তবে ক্রেতার কাছে সরাসরি জেলেদের এই মাছ
বিক্রিতে বিপাকে পড়েছেন ইলিশের মৌসুমি ব্যাপারীরা।
মিরসরাই উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের হিসাব অনুসারে, এবার উপজেলার ইছাখালী, বামনসুন্দর, সাহেরখালী ও ডোমখালী—এই চার ঘাট দিয়ে ১২০টি ইঞ্জিন নৌকায় প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ জেলে ইলিশ ধরছেন অগভীর সমুদ্রে। একটি নৌকায় চার থেকে ছয়জন পর্যন্ত জেলে থাকেন।
গতকাল শুক্রবার মিরসরাইয়ের সমুদ্রের উপকূলে সাহেরখালী ও ডোমখালী ঘাট দুটি ঘুরে দেখা যায়, ইলিশ কিনতে সেখানে ভিড় করছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কয়েক শ মানুষ। জোয়ার-ভাটা হিসাব করে সকাল ও বিকেল দিনে দুবার ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে এসব ঘাটে। ইলিশ নিয়ে নৌকা আসতেই হাঁকডাকে সরগরম হয়ে ওঠে পুরো ঘাট এলাকা। নৌকায় থাকতেই ঝুড়িতে সাজিয়ে রাখা ইলিশ বিক্রির তোড়জোড় শুরু হয়। দর-কষাকষি চলে ক্রেতা-বিক্রেতার। এখানে মাছ ওজন মেপে বিক্রি হয় না। ঝুড়িসুদ্ধ মাছের ওজন অনুমান করে দর দেন জেলেরা। উন্মুক্ত দর-কষাকষি চলে। যাঁর দর বেশি ওঠে, তিনি পান মাছ। মাছের আকার ও ওজন অনুপাতে ঘাটে প্রতি ঝুড়ি মাছ এক হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা যায়।
গতকাল বিকেলে সাহেরখালী ঘাটে কথা হয় মিরসরাইয়ের মিঠানলা ইউনিয়ন থেকে ইলিশ কিনতে আসা প্রবাসী মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে। ছয় হাজার টাকায় দুই ঝুড়ি ইলিশ কিনেছেন তিনি। জানতে চাইলে বলেন, ‘ঘাটে সরাসরি ইলিশ কেনা যায় বলে বাজারের তুলনায় দাম কিছুটা কম পড়ে। তা ছাড়া ফরমালিন ও বরফ ছাড়া তাজা ইলিশের নিশ্চয়তা তো আছেই। আমার কেনা দুই ঝুড়িতে ১৫ থেকে ১৬ কেজি ইলিশ হবে। নিজেরা খাব। আত্মীয়দেরও দেব কিছু।’
ঘাটে ইলিশ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে ডোমখালী ঘাটের রেবতী মোহন জলদাস বলেন, ‘আমরা যারা সমুদ্রে মাছ ধরি, তারা ঘাটেই বিক্রি করি। এ নিয়ম চিরকালের। আগে ঘাটে সাধারণ মানুষ আসত না। তাই একতরফা দামে ব্যাপারীদের কাছে মাছ বিক্রি করতে হতো। এখন বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষ মাছ কিনতে আসে ঘাটে। এতে কিছুটা বেশি দামে মাছ বিক্রি করতে পারি আমরা। তবে যাদের দাদন নেওয়া আছে, তাদের দাদনদারের হাতেই কম দামে মাছ তুলে দিতে হয়।’
মিরসরাইয়ের মৌসুমি ইলিশ ব্যবসায়ী মো. খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের টানাটানিতে এ বছর ঘাটে কোনো ইলিশই কেনা যাচ্ছে না। ইলিশ কিনতে প্রত্যেক ঘাটে কয়েক শ মানুষ ভিড় করছেন প্রতিদিন। বরফ, গাড়িভাড়াসহ ব্যবসায়ীদের যা খরচ হয়, তাতে সাধারণ ক্রেতাদের দামে ব্যবসায়ীরা মাছ কিনতে পারেন না। তাই এবার অনেক ইলিশ ব্যবসায়ী ঘাটেই যাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা জ্যৈষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর জুলাই ও আগস্ট দুই মাসে মিরসরাইয়ের জেলেরা এখন পর্যন্ত ৬০ টনের মতো ইলিশ সংগ্রহ করেছেন। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় কয়েক বছর ধরে এখানকার মানুষের ঘাটে গিয়ে ইলিশ কেনার প্রবণতা বাড়ছে। এতে জেলেরা লাভবান হচ্ছেন।