আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে এক হাজার ২০৯ জন গুম হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। আজ শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস এর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৯ সালের শুরু থেকে ২০১৮ সালের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৫০৭টি জোরপূর্বক গুম প্রামাণ্য দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছে নাগরিক সমাজ বিষয়ক গ্রুপগুলো। গুম হয়ে যাওয়া মানুষের মধ্যে ২৮৬ জন জীবিত ফিরেছেন ঘরে। ৬২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে মৃত অবস্থায়। বাকি ১৫৯ জন আজও নিখোঁজ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ গঠন করার পর থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা এক হাজার ২০৯ জন উল্লেখ করে রিজভী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুমের সংখ্যা ৭৮১ জন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, লাকসাম বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, সুমন, ছাত্রনেতা জাকির, নিজামুদ্দিন মুন্না, তারিকুল ইসলাম ঝন্টু, আদনান চৌধুরী, মো. সোহেল, খালিদ হোসেন সোহেল, সম্রাট মোল্লা, মাহবুব হাসান সুজনসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী। বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে দুই মাস গুম করে রাখার পর অন্য দেশে ফেলে দিয়ে এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
রিজভী বলেন, বৃহস্পতিবার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে ২০১৪ থেকে ২০১৯ (জুলাই) পর্যন্ত ৩৪৪ জন গুমের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে পরবর্তী সময় ৪৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৬০ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ৩৫ জন ফেরত এসেছে। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন যে, বিশেষ বাহিনী- র্যাব, ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে সাদা পোশাকে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ গুমের জন্য সন্দেহ করা হয়- পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র্যাবকে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে গুমের ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা শুরু হয়েছিল ১৯৭২ থেকে ‘৭৫ সালে। গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা এখনও পথ চেয়ে বসে আছেন, ছোট শিশুরা অপেক্ষা করছে বাবা ফিরে আসবে সেই আশায়, সন্তানের দুশ্চিন্তায় অনেকের বাবা-মা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। নিখোঁজ সুমনের মা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অন্ধ হয়ে গেছেন। তিনি বলেন, গুমকে ব্যবহার করা হচ্ছে সুদুরপ্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে, বিরোধী দল ও মতকে নির্মূল করে রাষ্ট্র-সমাজে একমাত্রিকতা, কর্তৃত্ববাদী ও একদলীয় শাসন ব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করাই এর মূল লক্ষ্য।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।