আমাজানের গহিনে নগ্ন বঙ্গললনা

বিচিত্র

klkসাধারণ জীবনের চেয়ে একটু আলাদা স্বাদ পেতে চেয়েছিলেন বাঙালি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সারাহ বেগম নামে এক তরুণী। স্বপ্ন ছিল, সবার থেকে আলাদা কিছু করে দেখাবেন তিনি। সেই স্বপ্নের জোয়ারে ভেসে গিয়ে পৌঁছে গেলেন ল্যাতিন আমেরিকার আমাজনের গহীনে থাকা হিংস্র আদিবাসীদের ডেরায়।

আদিবাসীদের জীবনযাপনের ওপর ডকুমেন্টারি নির্মাণের জন্য সেখানে যান তিনি। কিন্তু হিংস্র আদিবাসীদের ওপর এটি নির্মাণ করা সহজ ছিল না তার জন্য। তাই কৌশলে আদিবাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে গিয়ে বিয়ে করলেন আমাজনেরই এক আদিবাসী যোদ্ধাকে!

গল্পটা শুনে ভাবছেন, এমনটা আবার হয় নাকি? এই পৃথিবীতে সবই সম্ভব। এমন আজব কা-টি ঘটিয়েছেন সারাহ। তিনি নিজের গোটা কাহিনী ব্যাখা করেছেন নিজের সামাজিক মিডিয়াতে। আর এখন এ নিয়েই পড়ে যায় হইচই।

ওই বাঙালি তরুণী জানিয়েছেন, জীবনে ব্যতিক্রমী কিছু করতে চেয়েছিলেন। যেমন ভাবা, তেমনই কাজ। নিজের চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে পাড়ি জমালেন আমাজনের গভীর জঙ্গলে। সঙ্গে নিলেন একজন সিনেমাটোগ্রাফারকে। উদ্দেশ্য, হুয়ারোয়ানির আদিবাসীরা বসবাস করেন দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে তেল সমৃদ্ধ এলাকা। সেখানেই আনাগোনা বেশি তেল অনুসন্ধানকারীদের। মুষ্টিমেয় সুযোগসন্ধানীদের হুমকিতে ব্যাহত হচ্ছে ওই এলাকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা ও জীববৈচিত্র্য। এই বিষয়টিকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে নিজের জমানো টাকা নিয়ে রওনা দিলেন ইকুয়েডরে।

লাতিন আমেরিকার আমাজনের গভীরে যারা বাস করেন, তারা কোনো দিন সভ্যতার আলো দেখেননি। এখনও তারা লজ্জা নিবারণের জন্য পোশাক পড়তে শেখেননি। সেই ডেরায় যেতে এখনো ভয় পান অভিজ্ঞ ও সাহসী পরিবেশবিদ ও বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সারাহ-এর প্রয়াসের কথা জানতে পেরে তাকে সাদরে গ্রহণ করে নেয় আদিবাসীরা। তারপর সেইসব আদিবাসীদের সঙ্গে বন্ধু পাতিয়ে নিজের কাজ শুরু করেন। ওখানে গিয়ে শুধু বন্ধু পাতানোতেই থেমে থাকেননি, সভ্যতার আলো থেকে বহু দূরে থাকা আদিবাসী শিকারীর সঙ্গে বিয়েও সেরে ফেলেন এই ব্রিটিশ চিত্রপরিচালিকা। তাও আবার কনের বয়স ২১, বরের বয়স ৫০!

সারাহ জানান, আদিবাসীদের গ্রামে যাওয়ার বেশ কিছুদিন পর তাকে একটি কুঁড়েঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই ঘরের সব নারীরা নগ্ন। ঘরে ঢুকতেই তারা জানালো, সারাহ-এর জন্য জঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী পোশকটি বানানো হয়েছে। গাছের আঁশ দিয়ে সুন্দর পোশাকটি শুধুমাত্র কটিদেশে জরানোর জন্য।
প্রথম প্রথম নগ্ন হতে বিবেকে বাঁধত তার। মনে হত, সেখান থেকে পালিয়ে বাঁচবেন। কিন্তু পরে ভেবে দেখলেন, জঙ্গলের এইসব মানুষের সঙ্গে মিশতে হলে, জানতে হলে তাকে নগ্ন হতে হবে। নগ্ন সারাহকে ম্যাকাও পাখির পালকের মুকুট পরিয়ে সারাহকে নিজেদের পরিবারের অংশ করে নিয়েছিল সেখানকার মানুষেরা।

বিয়ে প্রসঙ্গে সারাহ বলেছেন, বিয়ের পর রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। পরে আদিবাসীরাই তাকে আশ্বস্ত করে জানান, বিয়েটা মানা বা না মানা পুরোপুরি সারাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে। বহিরাগত হিসেবে জঙ্গলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার প্রতীক হিসেবে এই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কাজের জন্য সেখানে যাওয়া, সেই কাজ ভালোমতো চলার পর একদিন পাকস্থলি সংক্রমণে আক্রান্ত হয় বাঙালি তরুণী। চিকিৎসার প্রয়োজনে ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফিরে আসেন আধুনিক দুনিয়ায়।

হুয়ারোয়ানিদের ওপর বানানো এই আধঘণ্টার ডকুমেন্টরি গত বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে জায়গা পেয়েছিল। এছাড়া শেফিল্ড ডকুমেন্টরি ফেস্টিভ্যাল ও অ্যাডভেঞ্চার ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও জায়গা করে নিয়েছিল ডকুমেন্টরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *