প্লাষ্টিক সামগ্রীর ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী কাকিনার মৃৎশিল্প

Slider জাতীয় রংপুর সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী


হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ বাজারে প্লাষ্টিক সামগ্রীর ভিড়ে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনার চিরচেনা মৃৎ শিল্প। দেশের বিভিন্ন স্থানের মত লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনায় ও মৃৎ শিল্পীদের ঘরে হাহাকার নেমে এসেছে। মাটির তৈরি হাড়ি-পাতিলের ব্যবহার কমে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার দৃশ্যপট দেখা দিয়েছে অভাব আর অনাটন।

দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা কাকিনার এই কুমার সম্প্রদায়ের, এমনিতেই নুন আনতে পান্তা ফুরায়। এমন সময় বর্ষা মৌসুমে তাদের মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দারিয়েছে। ঠিক মতো আসবাপত্র তৈরি করে বাজার জাত করতে পারেন না বলে জানায় কুমারেরা।

কুমারপাড়ার চাকা আজ আর তেমন একটা ঘোরে না বললেই চলে। বাংলাদেশের কুমার সম্প্রদায় যুগ যুগ ধরে এ শিল্প টিকিয়ে রেখেছে। কুমার সম্প্রদায়ের হাঁড়ি-পাতিল ও কলস সহ যে কোন মৃৎ শিল্প তৈরিতে প্রধান উপকরন হচ্ছে এটেল মাটি,জ্বালানি কাঠ,শুকনো ঘাস ও খড়।

এক সময় মাটির তৈরি জিনিসের বহুমাত্রিক ব্যবহার ছিল তখন এ শিল্পের সব মহলেই কদর ছিল।

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এ শিল্পের মালামাল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও সরবরাহ করা হতো। র্সূয উঠার সঙ্গে সঙ্গে কুমাররা মাটি দিয়ে তৈরি পাতিলের বোঝাই ভার নিয়ে দলে দলে ছুটে চলত প্রতিটি গ্রামের হাটে ও মহল্লায়। পাতিল,গামলা,ক‚পি বাতি,থালা,দূধের পাত্র, ভাঁপাপিঠা তৈরির কাজে খাঁজ,গরুর খাবার পাত্র,কুলকি,ধান-চাল রাখার বড় পাত্র,কড়াই,মাটির ব্যাংক,শিশুদের জন্য রকমারি নকশার পুতুল,খেলনা ও মাটির তৈরি পশুপাখি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত এবং পন্যের বিনিময়ে ধান সংগ্রহ করে সন্ধায় ধান বোঝাই ভার নিয়ে ফিরে আসত বাড়িতে। ওই সব ধান বিক্রি করে সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনত।

যুগের পরিবর্তনে আধুনিকতার ছোয়ায় আজ এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনার কুমার পরিবারগুলোর নেই কোন আধুনিক মেশিন ও সরজ্ঞাম। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেকেই পূর্ব পুরুষের এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন।

জয়ন্তী রানী পাল নামে এক কুমার জানায়,দূর-দূরান্তর থেকে মাটি সংগ্রহ করে মাটিত আসবা পত্র তৈরি করি কোন রকম টানা পোড়ার মধ্যদিয়ে সংসার চলে,ছেলে মেয়ে দের পরাশোনার খরচ জোগাতে এক মাত্র ভরসা মাটির আসবা পত্র তৈরি করা।কিন্তুু প্লাষ্টিক সামগ্রীর জন্য বাজারে মাটির তৈরি আসবা পত্র কম বিক্রি হয়।

কুমার পাড়ার বুদারু পাল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, অভাব অনটনের মধ্যে ও হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার বাপ-দাদার পেশা বুকে আঁকরে ধরে আছে। মাটির হাঁড়ি-পাতিল,ঢাকনা হাট-বাজারে ভ্যান ভারা দিয়ে হাটে আনলেও তা তেমন বিক্রি হয় না।

হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে মাটির জিনিস তৈরি করে রোদে শুকিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে ব্যবহারযোগ্য করে সেগুলো জেলা-উপজেলার হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়।

আমরা সরকারের কাছে থেকে স্বল্পশর্তে ঋন সহায়তা পেলে হয়ত এ পেশা চালিয়ে যেতে পারবো ।

কোনা পাঁল নামে এক কুমাড় জানায়, আমাদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে এই মৃৎ শিল্পকে ধরে রাখতে পারবো এবং ট্রেনিং এর ব্যাবস্থা হলে আমাদের এই পেশা টিকিয়ে রাখা সম্ভব। তারা ট্রেনিং এর মাধ্যমে মৃৎ শিল্পের সাথে জরিত পরিবার গুলো সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ডিজাইনের পন্যসামগ্রী উৎপাদন করতে পারবে বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *