মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের শান রাজ্যের বিদ্রোহী গোষ্ঠী নর্দার্ন অ্যালায়েন্স এর সঙ্গে সংঘর্ষে দেশটির সেনাবাহিনীর অন্তত ৩০ সদস্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। চীন সীমান্তের কাছের এই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পৃথক সংঘর্ষে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রাণহানি ঘটে বলে দাবি করেছে বিদ্রোহী ওই গোষ্ঠী। এছাড়া সংঘর্ষে গৃহহীন হয়ে পড়েছে আরো ২ হাজারের বেশি মানুষ।
তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এতো সংখ্যক সেনা সদস্য নিহত হওয়ার দাবিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
বুধবার থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের ইংরেজি দৈনিক দ্য ইরাবতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। তবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রাণহানির এই খবর উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের এই দাবি অসম্ভব।
নর্দান অ্যালায়েন্স বলছে, শান রাজ্যের লাশিও থেকে মুসে মহাসড়কের কুটকি মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ৯টি সংঘর্ষ হয়েছে। এসব সংঘর্ষের কোনোটি ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ধরে চলেছে। তবে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে এই সংঘর্ষের অবসান ঘটে।
দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী এই গোষ্ঠী বলছে, সরকারি ৩০ সেনাসদস্য নিহত ও ১৬ সদস্য আহত হয়েছে। তবে সংঘের্ষ বিচ্ছিন্নতাবাদী এই গোষ্ঠীর কয়েকজন সদস্য আহত হলেও কারও প্রাণহানি ঘটেনি বলে জানানো হয়েছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ্য মিন তুন বলেন, সংঘর্ষ হলেও ৩০ সৈন্যের প্রাণহানি অসম্ভব। তিনি বলেন, নং চো ও কিয়াকমি শহরে দুটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কিয়াকমির সংঘর্ষে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) একটি অস্থায়ী ঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে।
নর্দান অ্যালায়েন্স দেশটির বিচ্ছিন্নতাবাদী তিনটি গোষ্ঠীর জোট। টিএনএলএ ছাড়াও আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এই জোটের সদস্য।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ্য মিন তুন বলেন, কুটকাই এলাকায় আরো একটি সংঘর্ষ হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল থেকে একটি বন্দুক, সামরিক সরঞ্জাম এবং একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। আমরা খবর পেয়েছি যে, লাশিও এবং কুটকাই এলাকায় বিদ্রোহীদের অনেক সদস্য নিহত হয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত ১০ বিদ্রোহীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গত ১৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার দাবি করেছে নর্দার্ন অ্যালায়েন্স। সংঘর্ষের ষষ্ঠ দিন বুধবার কুটকাইয়ে আবারও সংঘর্ষের দাবি করেছে বিদ্রোহীদের এই জোট।
বুধবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলছে, মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের সহিংসতা বিধ্বস্ত শান রাজ্যের নতুন এই সংঘর্ষ দেশটির নেত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির জন্য বড় ধাক্কা।
উত্তরাঞ্চলের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযান ও বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনায় ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে চাপের মুখে রয়েছেন সু চি। এর মাঝে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর নতুন এই সংঘর্ষ সু চি নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকারের ভাবমূর্তিকে আবারও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
সূত্র : দ্য ইরাবতি