রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবার ভারতীয় নাগরিক নিয়ে বিপাকে পড়েছে। আবারও নতুন করে ভোটার তালিকায় তিন ভারতীয় নাগরিকের সন্ধান পাওয়া গেছে।
চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের আগেই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগেও ইসি একাধিকবার ভোটার তালিকায় ভারতীয় নাগরিকদের সন্ধান পেয়েছে। কিন্তু কমিশনের দৃশ্যমান ভূমিকার অভাবেই অসাধু চক্রের সহযোগিতায় বিদেশিদের ভোটার করার অপকৌশল এখনো অব্যাহত রয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, রাজধানীর সূত্রাপুরের অ্যাডভোকেট বিষ্ণুপদ দাসসহ বেশ কয়েকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে ইসি তিন ভারতীয় নাগরিকের সন্ধান পায়। পরে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংশোধনকারী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় ইসি।
বুধবার পাঠানো ইসির সহকারী সচিব রৌশন আরা বেগম স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, চলমান ভোটার তালিকায় হালনাগাদের ঢাকা মহানগরীর সূত্রাপুর থানার ৪৮ নম্বর নর্থব্রুক হল রোডের ঠিকানায় তিন ভারতীয় নাগরিক ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন মর্মে জনৈক বিঞ্চুপদ দাসসহ বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেছেন। আগামী ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
অ্যাডভোকেট বিষ্ণুপদ দাস তার অভিযোগে বলেন, ‘কিছু বিদেশি নাগরিক রাজধানীর সূত্রাপুর থানার ৪৮ নর্থব্রুক হল রোডে চলমান হালনাগাদ ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। হালনাগাদ ভোটার তালিকা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে জানা যায়, তিন জন ভারতীয় নাগরিক (জন্মসূত্রে) ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে গত জুলাই মাসে ঢাকাতে প্রবেশ করেন। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে স্থায়ীভাবে ভারতে বসবাস করেন। কিন্তু তারা চলমান হালনাগাদ ভোটার তালিকায় সুকৌশলে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন যা বেআইনি, অবৈধ এবং ফৌজদারী আইনে দণ্ডনীয় অপরাধের শামিল।’
বিদেশি নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে ১৪টি উপজেলাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার পরও ইসি বিদেশি নাগরিকদের ঠেকাতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহয়তায় বিদেশি নাগরিকরা সুকৌশলে ভোটার তালিকায় প্রবেশ করছেন বলে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ইসিতে অভিযোগ করেছেন। তারপরও ইসি কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো ওই অভিযোগে বিদেশি নাগরিকদের ভোটার করতে সহয়তা করছেন এমন জনপ্রতিনিধিদের নামও রয়েছে।
এছাড়াও সম্প্রতি সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা ইসিকে জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ও বিদেশিদের জাতীয়তা এবং জন্মসনদ প্রদানকারী জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার নেয়ার সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় গৃহিত হলেও এর সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি। জনপ্রতিনিধিরা নিজের ভোটব্যাংক বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে ইসি সূত্র জানিয়েছে, যেসব জনপ্রতিনিধি বিদেশি নাগরিকদের ভোটার করতে বিভিন্নভাবে সহয়তা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ভোটার তালিকায় বারবার বিদেশি নাগরিক প্রবেশ করছেন।