ঢাকা: বদলে গেছে বিটিসিএল। আজ থেকে বাতিল হচ্ছে ল্যান্ড ফোনের মাসিক লাইন রেন্ট। শুধু তাই নয়, মাসিক মাত্র ১৫০ টাকায় বিটিসিএল থেকে বিটিসিএলে যত খুশি মিনিট কল করা যাবে। এ ছাড়াও বিটিসিএল থেকে অন্য যেকোনো অপারেটরে মাত্র ৫২ পয়সা মিনিট কলচার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিটিসিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টেলিফোন সেবা আরো জনবান্ধব ও সময়োপযোগী করার লক্ষ্যেই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত ৭ই আগস্ট ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ে তার দপ্তরে এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া গ্রাহকদের ঘরে বসেই বিকাশ কিংবা রকেটের মাধ্যমে বিল পরিশোধের ব্যবস্থাও রয়েছে। পাশাপাশি বিটিসিএল’র এডিএসএল ও জিপিওএন ইন্টারনেট মূল্য ব্যাপক হ্রাস করা হয়েছে।
একসময় টিঅ্যান্ডটি’র টেলিফোন লাইন পেতে গ্রাহকদের যুদ্ধ করতে হতো। ডিমান্ড নোটের বিশ হাজার টাকা জমা দিয়েও অপেক্ষা করতে হতো বছরের পর বছর। এছাড়া তদবির হলে দ্রুত সময়ে হয়ে যেতো। কিন্তু গত দুই দশকে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো টিঅ্যান্ডটি’র চাহিদাকে একেবারে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। বিটিসিএল কোম্পানিতে রূপান্তর হলে এর চাহিদা একেবারেই কমে যায়। গ্রাহক তার মোবাইল ফোনেই টিঅ্যান্ডটি লাইনে কথা বলতে পারে। এছাড়া মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখা যায়। ফলে টিঅ্যান্ডটি ফোন থেকে মানুষ ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে। একপর্যায়ে ডিমান্ড নোটের টাকার পরিমাণ একেবারে কমিয়ে আনা হয়। তারপরও মানুষ টিঅ্যান্ডটিমুখী হচ্ছে না। এ অবস্থায় বিটিসিএলকে ফের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে নেয়া হয় নানা সিদ্ধান্ত। বর্তমানে ল্যান্ড ফোনে কথা বলা হোক আর না হোক মাসিক ১৬১ টাকা লাইনরেন্ট ও ভ্যাট ২৪ টাকা দিতে হতো গ্রাহকদের। আজ থেকে এ লাইনরেন্ট উঠে যাচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা ল্যান্ড ফোনের প্রতি আকৃষ্ট হবে বলে আশা করছেন বিটিসিএল কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিটিসিএলকে জনবান্ধব এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্টদের আরও আন্তরিকতা, নিষ্ঠা এবং সর্বোচ্চ সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। সর্বোচ্চ গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে জনবান্ধব সেবা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সম্ভাব্য সবকিছু করার কথাও জানানা মন্ত্রী।
এছাড়াও গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে বিদ্যমান জনবলকে আধুনিক প্রযুক্তি উপযোগী করে তৈরি, বিডি ডোমেইন নিবন্ধন ফি ও টেলিফোন সংযোগের ডিমান্ড নোট পদ্ধতি পরিবর্তন, গ্রাহক সেবা অটোমেশন করে বিটিসিএলকে জনবান্ধব ও লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। যার বাস্তবায়নও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অটোমেশন পদ্ধতিতে ঘরে বসেই যাতে গ্রাহকগণ সেবা পেতে পারেন এ বিষয়েও কাজ শুরু হয়েছে।
৭ই আগস্টের বৈঠকে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশে ঢুকেছে বাংলাদেশ। এই অগ্রযাত্রা আরও বেগবান করতে ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশ ফাইভজি প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করবে। শহর এবং গ্রামের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য যাতে না হয় সেই লক্ষ্যে দেশের ইউনিয়ন পর্যন্ত বিদ্যমান ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ফাইভজি উপযোগী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন মন্ত্রী। মন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী বিটিসিএল এর নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই নেটওয়ার্ক যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস এবং বিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল মাহমুদসহ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিসিএল এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিটিসিএলকে গ্রাহকদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে আরও বেশকিছু সুবিধা নিয়ে আসা হচ্ছে। একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ পুলিশের ৯৯৯ সার্ভিসও বিটিসিএল’র মাধ্যমে সংযোগকৃত।