ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সতর্ক করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। আজাদ জম্মু-কাশ্মীরের পার্লামেন্টে বিশেষ অধিবেশনে বুধবার তিনি বক্তব্য রাখেন। সেখানে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তানের ভিতরে ভারতের যেকোনো পদক্ষেপের শক্তিশালী পাল্টা জবাব দেবে পাকিস্তান। ওই অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন আজাদ জম্মু কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী রাজা ফারুক হায়দার। তিনি বলেন, কাশ্মীরের পর পাকিস্তানের ভিতরে সমস্যা সৃষ্টি করবে ভারত। তার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, (ভারতের) এইসব কর্মকান্ড কাশ্মীরেই শেষ হবে না। এই ঘৃণাপূর্ণ আদর্শ পাকিস্তানের দিকেও ধাবিত হবে।
আমাদের কাছে তথ্য আছে এবং আমরা এরই মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির দুটি সভা করেছি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পুরোপুরিভাবে অবহিত যে, আজাদ জম্মু কাশ্মীরে পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।
২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথমবারের মতো বুধবার আজাদ কাশ্মীর পরিদর্শনে যান ইমরান খান। ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইমরান। তিনি কাশ্মীরিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে বুধবার যান আজাদ কাশ্মীরে। সেখানে পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখেন। ভারতকে উদ্দেশ্য করে ইমরান খান বলেন, আমাদের তথ্যমতে, পুলওয়ামা হামলার পরে বালাকোটে তারা যেমন পদক্ষেপ নিয়েছিল, তার চেয়ে অধিক ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়েছে এখন। দখলীকৃত কাশ্মীর থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে দিতে তারা এখন আজাদ কাশ্মীরের দিকে নজর বাড়াতে চায়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে উদ্দেশ্য করে ইমরান খান বলেন, আপনার জন্য এটা আমার বার্তা: আপনি অ্যাকশনে যেতে পারেন এবং এর প্রতিটিরই পাল্টা জবাব দেয়া হবে। সেনাবাহিনী প্রস্তুত। শুধু সেনাবাহিনীই নয়। পুরো জাতি সেনাবাহিনীর পাশাপাশি যুদ্ধ করবে। মুসলিমরা যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছে তখন তারা বিশ্বের সেরা সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছে তারা। আপনারা যা করবেন তার জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত। শেষ পর্যন্ত আমরা লড়াই করব।
এর আগে কাশ্মীরিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে ইমরান খান আজাদ জম্মু কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে যান। সেখানে তিনি বলেন, পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে আমি আমার কাশ্মীরি ভাই ও বোনদের সঙ্গে অবস্থান করছি। তিনি সিরিজ টুইটও করেছেন। এতে ইমরান খান বলেছেন, বিশ্বের কাছে নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় জনতা পার্টির প্রকৃত চেহারা তুলে ধরেছেন। তার ভাষায়, আমাদের সামনে এখন ভয়াবহ এক আদর্শ। তা হলো হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর আদর্শ। শৈশব থেকেই এই সংঘের একজন সদস্য মোদি। নাৎসীদের মতো তাদের আদর্শ। তারা ভারত থেকে মুসলিম জাতিকে মুছে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। যদি আপনারা এই আদর্শ বুঝতে পারেন, তাহলে অনেক কিছুই বুঝবেন।
ইমরান খান আরো বলেন, আমরা আতঙ্কিত এই ভেবে যে, যখন দখলীকৃত কাশ্মীর থেকে কারফিউ প্রত্যাহার করা হবে তখন আমরা কি দেখব। তারা কি করতে চাইছে? নরেন্দ্র মোদি কৌশলগত ভুল করে ফেলেছেন। তিনি শেষ কার্ডটি ছুড়ে দিয়েছেন। তারা কাশ্মীরকে আন্তর্জাতিকীকরণ করেছেন। এখন বিশ্ববাসীর চোখ কাশ্মীর ও পাকিস্তানের দিকে। কাশ্মীরের কণ্ঠকে উচ্চে তুলে ধরার ক্ষেত্রে আমিই হব দূত।
ইমরান খান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও ছেড়ে কথা বলেন নি। তিনি বলেছেন, যদি এ ইস্যুতে যুদ্ধ হয় তাহলে তার জন্য দায়ী থাকবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তার ভাষায়, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো, যাদেরকে যুদ্ধ থামানোর জন্য গঠন করা হয়েছিল, তাদের প্রতি আমার বার্তা হলো: যদি যুদ্ধ হয় তাহলে আপনারা দায়ী থাকবেন। তিনি বলেন, পুরো মুসলিম বিশ্বসহ সারা দুনিয়া তাকিয়ে আছে জাতিসংঘের দিকে। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন চলাকালে জনগণ যখন বেরিয়ে আসবে তখন দেখতে পাবেন তাদের সংখ্যা। তিনি বলেন, কারফিউ চলাকালে যা কিছুই করছে ভারত, আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলব, আপনারা দায়ী। আমরা যে ফোরামই পাব, সেখানে আমিই দূত হব এবং প্রতিটি ফোরামে কাশ্মীরকে তুলে ধরব। মোদি তার শেষ কার্ডটি খেলে দেয়ার পর কাশ্মীর এখন স্বাধীনতার দিকে ধাবিত হবে।
তবে ইমরান খান একথা পুনর্ব্যক্ত করেন যে, যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। এতে বরং আরও সমস্যার সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে উত্তম সম্পর্ক রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার ভাষায়, কিন্তু আলোচনায় তাদের কোনোই আগ্রহ নেই। তাদের একটিই আগ্রহ। তাহলো, পাকিস্তানকে শিক্ষা দেয়া। তাদের অন্তর ঘৃণায় ভরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য শেষ করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, কোনো ভ্রান্ত ধারণার ওপর থাকবেন না। আপনি একটি আইন পাস করেছেন বলে মনে করবেন না কাশ্মীরিরা পরাজয় বরণ করে নিয়েছে। কিন্তু হিতে তা লড়াইকে আরো কঠোর করেছে। তাদের ভয় চলে গেছে। আমরা দেখেছি, তারা রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন। শুধু সাহসী জাতিই এভাবে বেরিয়ে আসতে পারে। মোদি, আপনি কাশ্মীরিদের ক্রীতদাস বানাতে পারেন না। পাকিস্তানকে শিক্ষা দেয়ার জন্য আজাদ কাশ্মীর নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে আপনার। কিন্তু প্রস্তুত হোন। আমি আবার বলছি, আপনার প্রতিটি পদক্ষেপের পাল্টা জবাব দেব আমরা। এখন সময় এসেছে আপনাকে শিক্ষা দেয়ার।