হাফিজুল ইসলাম লস্কর, সিলেট :: প্রতি ঈদ-উল-আযহার মতো এবারো সিলেট অঞ্চলের কওমী মাদ্রাসাগুলো বিভিন্ন এলাকার বাড়ী বাড়ী গিয়ে এবং শহরাঞ্চলের বিভিন্ন বাসা থেকে পশুর চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করতে এসে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সিলেটের কওমি মাদরাসাগুলোতে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই চমড়া নদীতে ও রাস্তায় ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অনেক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সংগ্রহকৃত চামড়াগুলো ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ হয়ে তাদের সংগৃহিত চামড়া মাটিতে পুতে ফেলেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার চামড়ার অস্থায়ী বাজারে প্রতি পিস ছোট চামড়ার দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, মাঝারি আকারের প্রতিটি চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং বড় চামড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সিলেটে ১০০ টাকাও কেউ দিতে চাচ্ছে না।
সিলেটের খাসদবির দারুস সালাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সারাদিনে সংগ্রহ করা ৮২৬ টি পশুর চামড়া নিয়ে রাতে আম্বরখানায় বিক্রি করতে নিয়ে গিয়েছিলেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্রেতারা মাত্র ২৫-৩০ টাকা দাম করছিলেন প্রতিপিস চামড়ার। এসময় চামড়া সিলেটের ব্যবসায়ীরা অজুহাত দেখান তারা গতবারের দেয়া চামড়ার টাকাই এখনো ঢাকা থেকে পাননি। সেগুলো বকেয়া থাকায় এবার তারা দাম দিয়ে চামড়া কিনতে পারছেন না। এমনকি এই টাকায় তারা যে চামড়াগুলো কিনছেন সেগুলোও বিক্রি করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা। একপর্যায়ে মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের ন্যায্য দাম দেয়ার দাবি জানিয়ে বলা হয় প্রয়োজনে বাকিতে চামড়াগুলো কিনে নিতে। ছয়মাস পরে টাকা দিলেও হবে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সেটিও মানেন নি। ফলে চামড়া ব্যবসায়ীদের গঠিত সিন্ডিকেটের প্রতিবাদ স্বরুপ ৮০০ চামড়া আম্বরখানায় ফেলে চলে যান তারা।
এদিকে সুনামগঞ্জের সৈয়দপুর মাদ্রাসার ৭৪০ টি সংগ্রকৃত চামড়ার ন্যায্য দাম না পেয়ে মাদ্রাসার ছাত্ররা মাটিতে পুতে ফেলেছে। জকিগঞ্জ উপজেলার এক মাদ্রাসা তাদের সংগ্রহকৃত চার শতাধিক চামড়া ১৮০০ টাকা ভাড়ায় ট্রাকে করে শহরে এনে বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র ২৫৫০ টাকায়। কানাইঘাট উপজেলার দেওয়ানচক দারুস সুন্নাহ ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষকরা চামড়ার অস্বাভাবিক দরপতনে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ১৬০০ টাকা দিয়ে ট্রাক ভাড়া করে দেড় শতাধিক চামড়া নিয়ে এসে চামড়ার দাম না পেয়ে বাধ্য হয়ে ১৪০০ টাকায় বিক্রি করেছি।
সিলেটের বালাগঞ্জে কোরবানির পশুর চামড়ার পাইকার না পাওয়ায় হতাশ হয়ে কুশিয়ারা নদীতে চামড়া ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা। এমন ঘটনা ঘটেছে সিলেটের আরও বেশ কয়েকটি উপজেলায়। চামড়া কেনার লোক না পাওয়ায় সারাদিন এবং রাতে পাহারা দিয়ে অপেক্ষার পর বাধ্য হয়েই মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার পাঁচটি মাদরাসার প্রায় চার শতাধিক চামড়া কুশিয়ারা নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
এছাড়া বালাগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ফিরোজাবাগ মাদরাসার ১১৯টি, বালাগঞ্জ মহিলা মাদরাসার প্রায় ১০০টি, তিলকচানপুর আদিত্যপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার ৩৪টি, নতুন সুনামপুর মাদরাসার ৭০টি ও দক্ষিণ গৌরীপুর মাদরাসার ২৭টি চামড়া নদীতে ফেলে দেয়া হয়। সবমিলে প্রায় কয়েক হাজার পশুর চামড়া নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। এ সময় মাদরাসার ছাত্রদের কান্নায় আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠে।
ফিরোজাবাগ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল মালিক ও মহিলা মাদরাসার শিক্ষা সচিব মাওলানা আব্দুল বাতিন বলেন, ঈদের দিন সোমবার দুপুর থেকে পশুর চামড়াগুলো মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মাদরাসার রাস্তায় রাখা হয়। কেউই এসব চামড়া কিনতে আসেনি। চামড়ার দুর্গন্ধে বাসাবাড়ি থেকে বের হতে পারছিলেন না মানুষ। এজন্য এলাকাবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়েছি আমরা। চামড়া পুঁতে ফেলার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তাই কুশিয়ারা নদীতে চামড়াগুলো ভাসিয়ে দিয়েছি।
চামড়ার দরপতন ও অরাজকতার পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এছাড়াও কওমি মাদরাসার দায়িত্বশীলদের দাবী, চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চমড়ার দাম অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে দিয়েছেন। এটি কওমি মাদরাসার ও সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছুই নয়। তাই সরকারের উচিত ষড়যন্ত্রকারীদের খুজে বের করে আইনের নিয়ে আসা।