ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। ইতিহাস ঐতিহ্যৃ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামে আওয়ামীলীগের ভূমিকা চির অম্লান। রাজনৈতিক কারণে যে কোন রাজনৈতিক দলকে অনেকটাই এদিক-সেদিক হতে হয়। সেটা নৈতিক ও অনৈতিক যাই হউক, সেটাকে রাজনৈতিক কৌশল বলা হয়ে থাকে। কোন রাজনৈতিক দল সংগ্রাম করে ক্ষমতায় যায় আবার কৌশল করেও ক্ষমতায় যায়। জোর করে ক্ষমতায় গিয়ে দল গঠন করে রাজনীতি করার নজীর বাংলাদেশে ইতোমধ্যে স্থপিত হয়ে গেছে। তাই কোন রাজনৈতিক দল কি ভাবে ক্ষমতায় গেলো সেটা আর এখন গণতন্ত্রের কাছে জবাবদিহি করে না। কারণ জনগনের ভোট ছাড়া ক্ষমতায় গেলে বা থাকলে গনতন্ত্র অর্থহীন হয়ে যায়। বাংলাদেশের বাস্তবতা অনেকটাই ক্ষমতায় যাওয়া বা থাকার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ন গণতন্ত্রের সঙ্গে নয়। বাস্তবতা এমন হয়ে গেছে যে, গনতন্ত্র এখন ক্ষতায় যাওয়ার অচল হাতিয়ার। এই অচল হাতিয়ার হাতে নিয়ে রাজনৈতিক দলরা রাজনীতি করছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের গনতন্ত্র এখন বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ।
বাংলাদেশের বাস্তবতা বলছে, যে দল অনেক সময় ক্ষমতায় থাকে সে দলে হালুয়া-রুটির জন্য হাইব্রিট ঢুকে যায়। এই এই হাইব্রিডরা ক্ষমতার ভেতরে থেকে দলের ক্ষতি করে। ৪৮ বছর বয়সী বাংলাদেশে যে দল বা যে শাসক ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে, সে দল বা শাসক হাইব্রিডের জন্যই ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। এটা পরিস্কার। তাই হাইব্রিড সম্পর্কে যতক্ষন সতর্ক থাকা যায় ততক্ষনই ভাল। সচেতনতা খর্ব হয়ে গেলে ক্ষমতা হারনোর সম্ভাবনা দেখা দেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে ভোট নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতি। জাতীয় নির্বাচন এক স্টাইলে আর স্থানীয় নির্বাচন অন্য ষ্টাইলে হচ্ছে। কোথাও রাতে আবার কোথাও দিনে জোর করে ভোট হচ্ছে এটা অভিযোগ। এরশাদ সরকারের আমলে ভোট কেন্দ্রে অনেক সময় বাক্সই পৌঁছাতো না। ভোট ও বাক্স কোথায় সেটা জানা না গেলেও কে পাশ করেছে সেটা জানা যেত। বিএনপির আমলে মাগুরা নির্বাচন সহ বেশ কিছু নির্বাচনে ভোটের দিন জোর করে সিল মারার অভিযোগ আছে। বর্তমান আওয়ামীলীগের আমলে জাতীয় নির্বাচন রাতে বা দিনে হলেও জোর করে সিল মারার অভিযোগ আছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জাতীয় প্রতীক থাকায় নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে সর্বময় ক্ষমতা প্রয়োগ করা হচ্ছে। এই ক্ষমতা প্রয়োগের ধরণ ও প্রকৃতিও অনেকটা আধুনিকায়ন হয়েছে। সকালে ব্যালট বাক্স আসায় রাতে আর ভোট দেয়া যায় না। তাই দলীয় নেতা-কর্মীদের দিয়ে ভোটের সময় ভোট মারা হত জাল ভোট হিসেবে। কিন্তু ইদানিং ভোট কেন্দ্রে থাকা প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলেও বাইর থেকে জটিকা বাহিনী এসে ভোট মেরে চলে যায় ভোট গ্রহন প্রশাসনকে জিম্মি করে। তবে এই ক্ষেত্রে অনেকটা ভাল খবর হল, স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সহজে ভোটে জোর করে সিল মারতে চাচ্ছে না, ফলে বাইর থেকে আনতে হচ্ছে জালভোটকারীদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকারী দলের কিছু ক্লিন ইমেজের নেতা এবার সিল মারার দায়িত্ব পালন করেছেন। নিজেরাও সিল মেরেছেন। নিজের জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় ভাড়া গিয়ে এই দৃশ্য তৈরী করার কারণে তাদের ক্লিন ইমেজ এখন ডার্ক ইমেজে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে চিহিৃত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী ব্যবহার করে তারা তাদের ইমেজও ধ্বংস করেছেন। সুতরাং
তারা নিজেরাই তাদের সম্পর্কে খারাপ ভাবতে মানুষকে বাধ্য করার কাজটি করেছেন। যা ভবিষৎ বিপদের অশনি সংকেত।
পরিস্থিতি বলছে, বাইর থেকে লোক এনে জাল ভোট মারাটা সরকারী দলের জন্য আপদজনক। কারণ লাইনে থাকা ভোটারদের সামনে যখন তাদের ভোটে অন্যরা সিল মারে, সেটা দেখে তারা লাইন থেকে ফিরে যায়। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভোটাররা ভোটকে রীতিমত ঘৃনা করা শুরু করবে।
এদিকে জালভোটকারীরা নিজের প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত করতে সকল কেন্দ্রেই সিল মারে। এই সকল কেন্দ্রে সিলামরাটা যে কত ক্ষতির, তা তরা জানেন না। কারণ কোন নির্বাচনে সকল কেন্দ্রে সিল মেরে পাশ করার অর্থ হয় যে, কোন কেন্দ্রেই কথিত বিজয়ী প্রার্থীর পাশ করার সম্ভাবনা থাকে না। এই গণহারে সিল সেটাই প্রমান করে। কিন্তু বাস্তবতা হল, যিনি সরকারী দলের প্রার্থী হন, তার অবশ্যই কোন না কোন কেন্দ্রে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে গণহারে সব কেন্দ্রে সিল মারার কারণে বিজয়ী প্রার্থীকে অসহায় ও অজনপ্রিয় করে যোগ্যতা ও গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরী হয়ে যায়।
সুতরাং নৌকা প্রতীকের পক্ষে নৌকার যাত্রী সেজে যারা সকল কেন্দ্রে সিল মেরে নৌকা প্রার্থীর গ্রহনযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়, তারা নৌকার আদৌ ভাল চায় কি না! তা নিয়ে সন্দেহ তৈরী হয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের সামাজিক গ্রহনযোগ্যতা কমতে থাকবে, যা নৌকার সার্বিক জনপ্রিয়তাকে শুন্যের কোটায় ফেলে দেবে। আর জনগনও মনে করে নিবে যে, নৌকার প্রার্থীদের ভোট লাগবে না, তাই তাদের ভালবাসারও প্রয়োজন পড়বে না।
এই রকম হলে তা হবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও নৌকার জন্য বিপদ সংকেত। তাই আওয়ামীলগের উচিত হাইব্রিড চিহিৃত করে বিতারিত করত: নৌকার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করা। না হয় জনগন ঘৃনা করা শুরু করতে পারেন বলে জনশ্রুতি আছে।