ঢাকা: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা মারতে ব্যবহার করছে কিউলেক্স মশার ওষুধ। মশার ওষুধের নমুনা পরীক্ষাও করা হয় মূলত কিউলেক্স মশার দিকে দৃষ্টি রেখে। মশা বা মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বতন্ত্র কোনো গবেষণা বা পরীক্ষা নেই। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা স্ব উদ্যোগে কোনো গবেষণা করি না। তবে সিটি করপোরেশন মশার ওষুধের স্যাম্পল (নমুনা) পাঠালে আমরা শুধু ওই স্যাম্পলের কার্যকারিতা পরীক্ষা করি।’
বিশেষজ্ঞরা বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা ও উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বর্তমানে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মশক নিধনের যে কার্যক্রম চালু আছে তা মূলত কিউলেক্স মশা দমনে সক্ষম। এই পদ্ধতিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এমনকি সিটি করপোরেশনগুলোতে মশক নিয়ন্ত্রণে বিশেষজ্ঞও নেই। মশক নিয়ন্ত্রণে যাঁরা কাজ করেন তারা এডিস মশা চেনেন না, দমনেও অভিজ্ঞতা নেই।
মশার প্রজাতিগুলোর মধ্যে মূলত চারটি বিভিন্ন রোগের জীবাণু বহন করে। বাহক ওই প্রজাতিগুলো হলো—অ্যানোফিলিস, কিউলেক্স, এডিস ও হেমাগোগাস।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আপনি যাকে মারতে চান তার দিকে বন্দুক তাক না করে যদি গুলি চালান তাহলে অন্যরা মারা যাবে। মশার ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটিই। এডিস মশা মারতে গেলে ঠিক তার বাসস্থান লক্ষ্য করে কাজ করতে হয়। এটি ঢাকায় করা হচ্ছে না। এখানে মশক নিয়ন্ত্রণ অভিযান পরিচালিত হয় সম্পূর্ণ কিউলেক্স মশাকেন্দ্রিক।’ তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের যে প্রচেষ্টা তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অকার্যকর। ঢাকা শহরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কোনো কার্যক্রম নেই। এ কারণে এডিস মশা বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
কবিরুল বাশার বলেন, ঢাকা শহরে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে কার্যক্রম নেওয়া হয় সেটি শুধু কীটনাশকনির্ভর। কীটনাশক স্প্রে করা হয় ড্রেন, ডোবা ও রাস্তার ধারে। এগুলো কিউলেক্স মশার আবাসস্থল। অন্যদিকে এডিস মশার আবাসস্থল হলো মানুষের বাড়ি, বাড়ির চারপাশ ও বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা পানি। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন শুধু একটি অস্ত্রই ব্যবহার করে, সেটি হলো কীটনাশক। বাকি তিনটি অস্ত্রই (পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, জৈবিক নিয়ন্ত্রণ ও জনগণকে সম্পৃক্তকরণ) তারা ব্যবহার করে না। যদি চারটি অস্ত্রই ব্যবহার না করা হয় তবে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ হবে না।
কবিরুল বাশার আরো বলেন, সিটি করপোরেশনের প্রশিক্ষিত দলই নেই যারা এডিস মশার লার্ভা বা পূর্ণাঙ্গ এডিস মশা চিনতে পারে। তারা কোথায় জন্মায় সেটিই হয়তো সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কর্মীরা জানেন না। তাঁরা শুধু ড্রেন, ডোবা, নর্দমাই চেনেন। সেই জায়গাগুলোতেই তাঁরা মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমগুলো চালান। তিনি বলেন, ২০০০ সালে ঢাকায় এডিস মশা নজরদারির একটি টিম ছিল ১৪ জনের। তারা বাড়ি বাড়ি যেত। তারা এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব কোন জায়গায় কেমন আছে সে অনুযায়ী সেই মশাগুলো ল্যাবরেটরিতে নিয়ে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতো। ঘনত্ব নির্ধারণ করে সিটি করপোরেশনকে তথ্য দেওয়া হতো। সেই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সিটি করপোরেশন তাদের কার্যক্রম চালাত। তখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। অথচ কলকাতা সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে অনেকটাই সফল হয়েছে।