ঢাকা: ডেঙ্গু মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে সবাইকে যার যার ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের নিজ নিজ এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করবেন। পাশাপাশি দেশবাসীকেও দায়িত্বশীল হতে হবে। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে শোকের মাসে কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে লন্ডন থেকে টেলিফোনে যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি অনুষ্ঠানস্থল থেকে লন্ডনে চিকিৎসার জন্য অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মোবাইল ফোন যোগে সংযুক্ত করেন। তার ফোনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেন, যা মাইক দিয়ে শোনানো হয়।
এসময় ডেঙ্গু প্রতিরোধে নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইদানিং আমাদের দেশে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গুর প্রভাব। ডেঙ্গুর প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে আমি কতগুলো নির্দেশনা দিয়েছি। এসময় শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে জাতির পিতা রক্ত দিয়েছেন। তার রক্ত ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে, বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। তিনি কষ্ট করে গেছেন। তার সেই মহান ত্যাগ কখনো বৃথা যেতে পারে না। একসময় বিভিন্ন স্মৃতিচারণ ও পিতার স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকারের কথা বলতে গিয়ে আবেগআপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী কৃষকলীগের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করার পটভূমি তুলে ধরে বলেন, আজকে আমরা জাতির পিতার উদ্দেশ্যে আমাদের পরিবেশকে রক্ষা, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে আসা এবং মানুষের জীবনকে উন্নত করার জন্যই আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। জাতির পিতা রক্ত দিয়ে গেছেন। তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে রক্ত দেবো। তিনি ঠিকই রক্ত দিয়ে গেছেন। তার রক্ত ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। আমরা প্রতিবছর ১৫ই আগস্ট উপলক্ষে রক্তদান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি। রক্ত মানুষের জীবন বাঁচাতে সহযোগিতা করে। রক্ত দিলে কিন্তু রক্ত কমে না, রক্ত কিন্তু বাড়ে। আর একজন মূমুর্ষ রোগীর জীবন রক্ষা পাওয়ার জন্য একটু ত্যাগ স্বীকার যে কোন মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা মানবতার জন্য দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য, জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বে অন্যতম অবস্থান। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের শ্রমিক অর্থনীতি অত্যন্ত শক্তিশালী। আমরা সবচেয়ে বৃহৎ বাজেট দিয়েছি। আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে যাচ্ছি। আমরা সবদিকেই বেশ এগিয়েছি। তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছি। সবার পড়ালেখার সুযোগ করে দিচ্ছি, উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছি। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। আমরা পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। কাজেই বাংলাদেশ সার্বিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমার কেবল একটা কথাই মনে হয়। যেমনভাবে একটি ভাল কাজ হয়। দেশের মানুষ ভাল থাকে। আমার মনে হয়, এতে বাবার আত্মা শান্তি পায়। তখন আমি চিন্তা করি নিশ্চয়ই তিনি বেহেশত থেকে দেখেন, তার দেশের মানুষ আজকে ক্ষুধায় কাতর হয় না। কষ্ট পান না। একথা চিন্তা করে তার আদর্শকে ধারণ করেই জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছি। আমি দেশের মানুষেরও দোয়া চাই। আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আর্তমানবতার সেবা করা, মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করা, এটা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। এর থেকে যে তৃপ্তি পাওয়া যায়, আনন্দ পাওয়া যায়, সেটা ভোগে পাওয়া যায় না, ত্যাগেই পাওয়া যায়। মহৎ অর্জনের জন্য মহৎ ত্যাগের প্রয়োজন হয় এটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশকে আমরা গড়ে তুলবো। আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো। দারিদ্রের হার আমরা কমিয়েছি, আরও কমাব। এই দেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। এছাড়াও প্রত্যেক নাগরিককে তিনটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৃক্ষরোপণ করা দরকার। আমি প্রত্যেককে তিনটি করে গাছ লাগানোর আহ্বান জানাচ্ছি। এতে একটি পরিবারের আয়ের উৎসও তৈরি হয়। জলোচ্ছ্বাস, দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে উপকূলে সবুজ বেষ্টনী একান্ত দরকার। লন্ডনে ৩রা আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান চোখের চিকিৎসার কাজে লন্ডনে অবস্থান করা শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ‘কৃষকের কণ্ঠ’ শীর্ষক একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এরপরই রক্তদান কর্মসূচি শুরু করার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ডেঙ্গু রোগীদের রক্ত সরবরাহের লক্ষ্যে ২০০ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হবে বলে জানান আয়োজক সংগঠনের নেতারা। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুর নাহার লাইলীসহ কৃষক লীগের নেতারা। কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা সভাপতিত্ব করেন এবং সভা পরিচালনা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সমীর চন্দ দে।
শোকের মাস এলেই অপশক্তিগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে: কাদের
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারানো শোকের মাস আগস্ট এলেই জঙ্গি, নাশকতাকারী ও সামপ্রদায়িক অপশক্তিগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তি?নি ব?লেন, শোকের মাসে ১৫ই আগস্ট আমাদের চেতনায় শক্তি সঞ্চার করে। একদিকে আমাদের হারানোর বেদনা, আবার নতুন করে হারানোর সেই শঙ্কা কাজ করে আমাদের মধ্যে। ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল যুবলীগ আয়োজিত মাসব্যাপী সংবাদ চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করার সময় তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রাজনৈতিক নেতা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। আগস্ট মাস এলে আমাদের প্রিয় এই নেতাকে ঘিরেই বিপদের আশঙ্কা থাকে। কারণ এই সময় অশুভ তৎপরতা যারা চালায়, তারা জেগে ওঠে। তাদের বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। যুবলীগকে সর্তকতার সঙ্গে সব অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হবে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতি করে একটি দল, তারা ১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তারা এই হত্যাকান্ডের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, পেছন থেকে মদত জুগিয়েছে, খুনিদের পুর্নবাসিত করেছে। ইনডেমনিটি আইন জারি করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা কারা? তাদের নেতা জিয়াউর রহমান। এদেশে রাজনীতিতে হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করেছে জিয়াউর রহমান। শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের উদার রাজনীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা জানেন ১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা ছিল। শেখ হাসিনা জানেন, দেশের জনগণ জানেন ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার নেপথ্যে কারা ছিল। তারপরও গণতন্ত্রের স্বার্থে, সুশাসনের স্বার্থে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কাজের সম্পর্ক রাখতে চাই। যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ।