ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দাবি করছেন জঙ্গি গোষ্ঠী আল কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেনের পুত্র হামজা বিন লাদেন নিহত হয়েছেন। তবে তিনি কোথায় ছিলেন অথবা কোন তারিখে নিহত হয়েছেন তা সুস্পষ্টভাবে জানা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এক অপারেশনে তিনি নিহত হয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে প্রায় সব পশ্চিমা মিডিয়া। তবে আল কায়েদা বা সংশ্লিষ্ট কোনো গ্রুপ এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া দেয় নি। হামজা বিন লাদেনকে দেখা হয় ‘ক্রাউন প্রিন্স অব জিহাদ’ বা জিহাদের যুবরাজ হিসেবে। ওসামা বিন লাদেন যে জিহাদের সূচনা করে গেছেন তার উত্তরাধিকারী বলা হয় তাকে। এ জন্য তাকে ধরিয়ে দিতে বা তার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিতে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ১০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
হামজা বিন লাদেনের বয়স প্রায় ৩০ বছর। তিনি এরই মধ্যে বেশ কিছু অডিও ও ভিডিও প্রকাশ করেছেন। তাতে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে হামলা চালানোর বার্তা দিয়েছেন।
তার মারা যাওয়ার খবর প্রথম প্রকাশ করে এনবিসি এবং নিউ ইয়র্ক টাইমস। এনবিসি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের তিনজন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, হামজা বিন লাদেন মারা গেছেন এ বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে বুধবার জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। একই অবস্থান হোয়াইট হাউজে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টনের।
২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে হামজা বিন লাদেনের পিতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিল বাহিনী। সেই হত্যার বদলা নিতে জিহাদিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হামজা। এ ছাড়া তিনি আরব অঞ্চলের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিদ্রোহ করার। এমন অবস্থায় মার্চ মাসে তার নাগরিকত্ব বাতিল করেছে সৌদি আরব। ধারণা করা হয়, তিনি ইরানে গৃহবন্দি ছিলেন। কিন্তু অন্য রিপোর্ট বলে যে, তিনি হয়তো আফগানিস্তান, পাকিস্তান অথবা সিরিয়ায় বসবাস করতে পারেন। পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে তার পিতার বাসভবনে ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযান পরিচালনার পর সেখান থেকে বেশ কিছু ডকুমেন্ট জব্দ করে যুক্তরাষ্ট্র। তার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আল কায়েদার নেতৃত্ব নেয়ার জন্য গড়ে তোলা হচ্ছিল হামজা বিন লাদেনকে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র একটি ভিডিও উদ্ধার করে, যাতে দেখা যায় হামজা বিবাহিত। ওই বিয়ের ভিডিও ধারণ করা হয়েছে তাতে। এতে বলা হয়, আল কায়েদার আরেক সিনিয়র নেতার মেয়েকে বিয়ে করেছেন হামজা। এই বিয়ে ইরানে হয়েছে বলে মনে করা হয়। তার শ্বশুরের নাম আবদুল্লাহ আহমেদ আবদুল্লাহ অথবা আবু মুহাম্মদ আল মাসরি। তাঞ্জানিয়া ও কেনিয়ায় ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে বোমা হামলায় তিনি জড়িত।
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ যে সন্ত্রাসী হামলা হয় তার মূলে রয়েছে আল কায়েদা। ওই হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জোরালো যুদ্ধ শুরু করে। হামলা চালায় আফগানিস্তানে। এরপর গত প্রায় এক দশক আল কায়েদার উপস্থিতি অনেকটাই ম্লান হয়ে যায় ইসলামিক স্টেট নামের জঙ্গি গ্রুপের উত্থানের ফলে।