ডেঙ্গু: ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিকেলে ৩ জনের মৃত্যু: ৬১ জেলায় বিস্তার

Slider জাতীয়


ঢাকা: রাজধানীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এডিশ মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ। দেশের অন্তত ৬১ জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। ডেঙ্গুতে গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন ও বরিশালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ বছরের চলতি জুলাই মাসেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৩ হাজার ১৮২ জন। এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ১৫ হাজার ৩৬৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ হাজার ৯৫৩ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪ হাজার ৪০৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এ তথ্য দিয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৩৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রতি ঘণ্টায় ভর্তি হচ্ছে ৫৬ জনের উপরে। দ্রুত গতিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। দেশের অন্যান্য জেলায় প্রতিদিন দ্বিগুণ হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। রাজধানীর প্রায় ঘরে ঘরে এখন ডেঙ্গু রোগীর খবর পাওয়া যাচ্ছে। আতঙ্কে আছেন প্রায় সকলেই। গতকাল রাজধানী ব্যতীত ৬১ জেলা থেকে ১৮শ’ ৮৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ১২শ’ ৮৩ জন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এদিকে রাজধানীর হাসপাতাল-গুলোতে অধিক সংখ্যক রোগী আসায় বিভিন্ন হাসপাতাল তাদের ঠাঁই দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আটজনের মৃতের খবর দিলেও এই সংখ্যা বেড়েই চলছে। বেসরকারি হিসাবে এটা পাঁচগুণের উপরে। গতকাল ঢাকার বাইরে থেকেও ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন তিনজন। এরা হলেন- লিটন হাওলাদার (২৫)। গত ২৭শে জুলাই ঢামেকে ভর্তি হয়েছিলেন লিটন হাওলাদার। লিটন হাওলাদারসহ গত ২৪ ঘণ্টায় ঢামেকে মারা গেছেন ৩ জন। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে রিতা (২৮) নামের এক গার্মেন্ট কর্মীর মৃত্যু হয় ঢামেকে। তিনি ২৭শে জুলাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাত পৌঁনে ২টার দিকে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফারজানা হক (৪৩)। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. নুরুল আমিনের স্ত্রী। এই নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ জন মারা গেল ডেঙ্গুতে। হাসপাতালগুলোতে যথেষ্ট সিট না থাকায় অনেক রোগীকে ভর্তি করা যাচ্ছে না। তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। ডেঙ্গু আতঙ্ক নিয়ে হাসপাতালে ছুটছেন রোগী ও তার স্বজনরা। ডেঙ্গু রোগীর স্বজনরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে বাণিজ্য করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এজন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালকে জরিমানাও করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৩৩৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রতি ঘণ্টায় ভর্তি হচ্ছে ৫৬ জনের উপরে। চলতি জুলাই মাসেই আক্রান্ত হয়েছে ১৩ হাজার ১৮২ জন। ঢাকার বাইরে থেকেও দিন দিন রোগী আসছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের পরিসংখ্যান মতে, জুলাই মাসে গড়ে প্রতিদিন ৪৩৯ জনের উপরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রাজধানীর বাইরে ঢাকা জেলা থেকে ১৫৯ জন, গাজীপুর থেকে ৯৯ জন, গোপালগঞ্জ ১০ জন, মাদারীপুর ১৭ জন, মানিকগঞ্জ ৩২ জন, নরসিংদী ২১ জন, রাজবাড়ী থেকে ২৭ জন,শরীয়তপুর ৯ জন, টাঙ্গাইল ৩৭ জন, মুন্সীগঞ্জ ১৮ জন, কিশোরগঞ্জ ৮৪ জন, নারায়ণগঞ্জ ১৯ জন, ফরিদপুর ২ জন, চট্টগ্রাম থেকে ১৪৩ জন, ফেনীতে ৭০ জন, কুমিল্লা ৫১ জন, চাঁদপুর থেকে ৮৮ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ২০ জন, লক্ষ্মীপুর ২২ জন, নোয়াখালীতে ৩০ জন, কক্সবাজার ১৩ জন, খাগড়াছড়ি ৫ জন, রাঙ্গামাটিতে ৩ জন, বান্দরবন একজন, খুলনায় ১২৮ জন, কুষ্টিয়া থেকে ৫৮ জন, মাগুরা ৩ জন, নড়াইল ২ জন, যশোর ৭১ জন, ঝিনাইদহ থেকে ২৫ জন, বাগেরহাট ৮জন, সাতক্ষীরা ১৭ জন, চুয়াডাঙ্গা থেকে ৬ জন, মেহেরপুর একজন, রাজশাহী থেকে ৬২ জন, বগুড়া ৯২ জন, পাবনা ৪৭ জন, সিরাজগঞ্জ ১৯ জন, নওগাঁয় ৩ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১১ জন, নাটোর ২ জন, রংপুর ৬১ জন, লালমনিরহাট ২ জন, কুড়িগ্রাম ৫ জন, গাইবান্ধায় ৪ জন, নীলফামারি ৫ জন, দিনাজপুরে ১৭জন, পঞ্চগড় একজন, ঠাকুরগাঁও ৬ জন, বরিশাল থেকে ৪২ জন, পটুয়াখালী ১২ জন, ভোলা ৬ জন, পিরোজপুর ২ জন, ঝালকাঠি একজন, বরগুনা ১৫ জন, সিলেট থেকে ৮০ জন, সুনামগঞ্জ ৪ জন, হবিগঞ্জ ৭ জন, মৌলভীবাজার ১৬ ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ৩০শে জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আটজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে এপ্রিলে দু’জন, জুনে দু’জন ও জুলাই মাসে চারজন মারা যান। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্র বলছে মৃত্যুর সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচগুণের বেশি হবে।

বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৭৯ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ২৯৯ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ১২১ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ২৬৬ জন, বারডেম হাসপাতালে ৫২ জন, বিএসএমএমইউতে ৯৬ জন, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগ ১৩২ জন, মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ২৫৩ জন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ২১৬ জন, বিজিবি হাসপাতালে ৩০ জন, কুর্মিটোলায় ২৪৭ জন, রাজধানীর ধানমন্ডি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪৬ জন, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১০৫ জন, ইবনে সিনা হাসপাতালে ৭৯ জন,স্কয়ার হাসপাতালে ৮৯ জন, ল্যাব এইডে ১৫ জন, গ্রীনলাইফে ১৭ জন, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কাকরাইলে ৯৪ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৯০ জন, খিদমা হাসপাতালে ৩০ জন, সিরাজুল ইসলাম মেডিকেলে ১১২ জন, এ্যাপোলো হাসপাতালে ৫৭ জন, আদ-দ্বীন হাসপাতালে ১০৮ জন, সালাউদ্দিন হাসপাতালে ৬৪ জন, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪২ জন, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ৬০ জন, বিআরবি হাসপাতালে ৩৫ জন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ১১ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *