৮২ সনে এরশাদ যখন ক্ষমতা দখল করেন তখন একটা জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু এরশাদের ক্ষমতা দখলকে কেউ স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়নি। ৯ বছর দেশের ছাত্র সমাজ এবং অতঃপর সমস্ত রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবীরা মিলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেয়। এরশাদ তখন দখলদার ও স্বৈরশাসক হিসেবে ঘৃণিত ছিলেন।
এরপর এরশাদ ৫ বছর জেল খেটেছেন।
সেই থেকে অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু যে লক্ষ্য নিয়ে এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই লক্ষ্য থেকে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলো সরে আসে; তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়নের কথা বিস্মৃত হয়।
সময় এমনও আসে যখন নির্বাচনে বিজয়ের কথা ভেবে এরশাদকে নিয়ে বড় দুটি রাজনৈতিক দল টানাটানি করে। অবশেষে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল তাকে তাদের সাথে ভেড়াতে সক্ষম হয়। তারাও স্বৈরশাসন চালায়। ২০১৪ সালের একপাক্ষিক নির্বাচন ও সর্বশেষে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন আগের রাতে সম্পাদনের মাধ্যমে কলঙ্ক ও জবরদখলের এক বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করে। গুম খুন এবং দুঃশাসনের মাধ্যমে তারা এমন এক নজির স্থাপন করে, যাতে এরশাদের ৯ বছরের স্বৈরশাসনও ম্লান হয়ে যায়।
একজন মানুষের মৃত্যুতে আমরা সাধারণত শোক প্রকাশ করি। তার নিকটজনদের সমবেদনা জানাই। আমিও জানাচ্ছি।
কে বড় স্বৈরশাসক ছিলেন সে বিতর্কের মধ্যে এখন যেতে চাই না। কিন্তু হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ যে একজন দখলদার ছিলেন এবং তার পতনের পর আমরা যে গণতন্ত্রের সৌধ নির্মাণ করতে প্রকারান্তরে অস্বীকার করেছি, সে কথা অস্বীকার করা যাবে না। আগামী দিনের গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের এটা মনে রাখতে হবে।