ব্রিটেন জিব্রাল্টার প্রণালি থেকে একটি ইরানি সুপার তেল ট্যাঙ্কার আটক করার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, এ ঘটনায় প্রমাণিত হয় ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। লেবাননের আল মিয়াদিন টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাকারে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি ইরানি তেল ট্যাঙ্কার আটকের ঘটনাকে জলদস্যুতা হিসেবে উল্লেখ করে আরও বলেছেন, ব্রিটিশরা কাজ কর্মে প্রমাণ করেছে তারা আমেরিকার তাবেদার এবং ওয়াশিংটনের অনুরোধেই তেল ট্যাংকার আটক করা হয়েছে।
জারিফ আরও বলেন, মার্কিনীরা ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুযোগে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত সে দেশের রাষ্ট্রদূতকেও অবমাননা করেছে।
গত ৪ জুলাই ব্রিটিশ নৌ সেনারা জিব্রাল্টার প্রণালি থেকে ইরানের তেল ট্যাঙ্কার আটক করে। জাহাজটি সিরিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই দেশটির দিকে যাওয়ার কারণেই আটক করা হয়েছে বলে লন্ডনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্রিটেনের এ অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে যত দ্রুত সম্ভব জাহাজটিকে ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ব্রিটিশ সরকার এমন সময় ইরানের তেল ট্যাঙ্কার আটক করেছে যখন ওই জাহাজটি আন্তর্জাতিক পানিসীমায় অবস্থান করছিল এবং আন্তর্জাতিক কোনো আইন লঙ্ঘন করেনি। এ অবস্থায় এটি আটকের ঘটনা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এবং এর পেছনে আমেরিকার উস্কানি ছিল। স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ বুরেল জাহাজ আটকের পরপরই বলেছেন, আমেরিকার নির্দেশ মেনেই ব্রিটেন ইরানের ওই তেল ট্যাংকা আটক করেছে।
ইরানের তেলবাহী জাহাজ এখনো আটক রয়েছে এবং জিব্রাল্টার স্থানীয় পুলিশ দাবি করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারণে জাহাজের নাবিকদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ব্রিটিশ সরকারের রাজনৈতিক খেলা থেকে বোঝা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে আগ্রহী ব্রিটেন আগের চেয়ে আরো বেশি আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করলেও ব্রিটেন ঠিকই আমেরিকাকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ব্রিটেন ও আমেরিকার মধ্যে বন্ধুত্বের ইতিহাস কেবল জাহাজ আটকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ইরান ইস্যুতে তারা বহু আগে থেকেই ঐক্যবদ্ধ।
জাহাজ আটকের মধ্য দিয়ে ব্রিটেন আসলে আমেরিকার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করল এবং তারা মূলত ইরানের তেল বিক্রি শূন্যে নামিয়ে আনতে চায়। ব্রিটিশ সরকার ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতা মেনে চলার পরিবর্তে আমেরিকার পথ অনুসরণ করে ইরানের তেল বিক্রি শূন্যে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে। অর্থাৎ লন্ডনও ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত।