সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় আগামী ১ জুলাই থেকে দুই মাস সকল খালে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বন বিভাগ। মাছের ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত ম্যানগ্রোভ এই বনের ৪ শতাধিক খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ করাসহ মৎস্য এবং মৎস্য প্রজাতির অবাধ প্রজনন ও সংরক্ষণে সব খালে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুন্দরবন বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সুন্দরবনের প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তানের জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪.১ বর্গ কিলোমিটার।
যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১.১৫ ভাগ। এই জলভাগে জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ১৩টি বড় নদ-নদীসহ ৪৫০টি খাল। জোয়ারের পানিতে সব সময় প্লাবিত হওয়া ম্যানগ্রোভ এই জলভাগে রয়েছে ভেটকী, রূপচাঁদা, দাঁতিনা, চিত্রা, পাংগাস, লইটা, ছরি, মেদ, পাসে, পোয়া, তপসী, লাক্ষা, কৈ, মাগুর, কাইন মাগুর, রূপালী ইলিশসহ ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ।
এছাড়া রয়েছে গলদা, বাগদা, চাঁকা, চালী, চামীসহ ২৪ প্রজাতির চিংড়ি। বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়াসহ ১৪ প্রজাতির কাঁকড়াও রয়েছে এখানে। এছাড়া ৪৩ প্রজাতির মালাস্কা ও ১ প্রজাতির লবস্টারসহ রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সুন্দরবন বিভাগের কাঠ থেকে নির্দিষ্ট পরিমান রাজস্ব পাশ-পারমিট নিয়ে ও অবৈধ পথে সুন্দরবনের মৎস্য এবং মৎস্য প্রজাতির সম্পদ আহরণ করতে জেলেরা বনে প্রবেশ করে থাকে। সাদা মাছের প্রজনন মৌসুমে মাছের আধিক্য থাকায় এক শ্রেণির জেলে অধিক লাভের জন্য সুন্দরবনের খালগুলোতে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ করে। এই বিষ দেওয়ার কারণে খালের ছোট-বড় সব মাছসহ মৎস্য প্রজাতির সকল প্রাণি মারা যায়। খালে বিষ সন্ত্রাসের কারণে মৎস্য এবং মৎস্য প্রজাতির অবাধ প্রজনন ও সংরক্ষণ বিনষ্টের পাশাপাশি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে আগামী জুলাই-আগস্ট এই দুই মাস সকল খালে মাছ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বন বিভাগ।
তবে, এই দুই মাস সুন্দরবনের নির্দিষ্ট করে দেওয়া বড়-বড় নদ-নদীগুলো থেকে মাছ আহরণের জন্য জেলেদের সীমিত আকারে পাশ-পারমিট দেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে খালগুলোতে যাতে করে কেই ঢুকতে বা মাছ আহরণ করতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারী করবে সুন্দরবন বিভাগ।