নাসির-সাব্বিরের বদলে শুভাগতকেই আমার পছন্দ

খেলা

pic-17_166754আগে থেকেই অনুমান করতে পারছি যে আমার বিশ্বকাপ দলে একজনের অন্তর্ভুক্তি আপনাদের কতখানি চমকে দিতে পারে! তবে ব্যাটিং-অর্ডারে ৭ নম্বরে শুভাগত হোমকে নেওয়াটা অনেক ভাবনা-চিন্তার ফল। যে কিনা নির্বাচকদের ওয়ানডে ভাবনায় থাকে না, তাকে রাখার ব্যাখ্যাই সবার আগে দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছি। এ জায়গায় নাসির হোসেন কিংবা সাব্বির রহমানই হয়তো সিংহভাগের পছন্দ। এদের মধ্যে প্রথমজন বাজে ফর্মের কারণে বাদ পড়েছে। তার জায়গায় এসে পরেরজন সম্প্রতি জিম্বাবুয়ে সিরিজে সাফল্য পেয়েছে। তবু আমার বিবেচনায় ওদের চেয়ে শুভাগতের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে দুটো কারণ। বিশ্বকাপ যেহেতু অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে, কাজেই সেগুলোকে উপেক্ষা করে যাওয়ার সুযোগ নেই বলেই মনে করি আমি।

আপনারা অস্ট্রেলিয়া-ভারত সিরিজে চোখ রাখছেন নিশ্চয়ই। খেয়াল করে দেখবেন, এ সিরিজে আমরা স্পিনারদের বিশেষ করে অফস্পিনারদের প্রাধান্যও লক্ষ করছি। মনে হচ্ছে, বিশ্বকাপেও এই ধাঁচের স্পিনাররা নিজ নিজ দলের হয়ে অবদান রাখতে পারবে। এ কারণেই শুভাগতের অফস্পিন কাজে লাগানোর চিন্তাকে আমি গুরুত্ব দিয়েছি। ও জেনুইন ব্যাটিং অলরাউন্ডার। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি অফস্পিনেও হাত পাকানো এ তরুণ তাই লোয়ার মিডল-অর্ডারে আমার প্রথম পছন্দ। ও এমন একজন ব্যাটসম্যান, যে কিনা খুব বেশি তুলে না মেরেও রান করতে সক্ষম। বিশ্বকাপেও ওর এ দক্ষতাটা আমাদের কাজে লাগবে, কারণ অস্ট্রেলিয়ায় একটু বড় মাঠেই খেলা হয়। সেখানে আমাদের ব্যাটসম্যানদের ক্রমাগত বিগ হিটে দ্রুত রান তুলে দেওয়ার সম্ভাবনাও তাই কম। ৭ নম্বর জায়গাটাই এমন যে নামার সঙ্গে সঙ্গেই রানের গতি বাড়ানোর দাবি থাকবে। সে জায়গায় শুভাগতের মতো কাউকেই দরকার, যে নিচে নিচে খেলেও বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে সক্ষম।

আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্বকাপগামী দলের ব্যাটসম্যানদের আরো কিছু পরামর্শ দিতে চাই। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার হিসেবে অস্ট্রেলিয়া সফর করেছি। ম্যানেজার ছিলাম ২০১০-এর নিউজিল্যান্ড সফরেও। আমার দেখামতে বলতে পারি, আমাদের ব্যাটসম্যানদের টেকনিকে একটু এদিক-সেদিক করে খেলতে হবে। বাংলাদেশের দুটো ম্যাচ আছে নিউজিল্যান্ডে। এ ছাড়া বেশির ভাগ খেলাই অস্ট্রেলিয়ায়। যেখানে উইকেট হবে বাউন্সি। বল আসবেও খুব দ্রুত। সে জন্য হাই ব্যাক লিফটে খেলতে অভ্যস্ত দলের শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের বলব, ওরা যেন কম ব্যাক লিফটের ওপর খেলাকে প্রাধান্য দেয়। আমি নিশ্চিত যে দলের কোচিং স্টাফের সদস্যরাও বিষয়টি ব্যাটসম্যানদের ধরিয়ে দেবেন।

বিশ্বকাপের আগে একটি ব্যাপার দেখে আমিও চমৎকৃত। আর সেটা হল সিম বোলিংয়ে উন্নতি। বিশেষ করে মাশরাফি বিন মর্তুজার বোলিং দেখে আমি মুগ্ধ। ওর বোলিংয়ের লাইন ও লেন্থ এখন যাকে বলে ‘নিয়ার পারফেক্ট’। আগে ‘ওয়াইড অব দ্য স্টাম্প’ একটু বেশি করত। কিন্তু এখন ওর বোলিংটা অনেক বেশি নিয়ন্ত্রিত। এই সুযোগে বলে রাখি, বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার ভার ওর কাঁধেই থাকা উচিত। কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে আমার দলে পেসার চারজন। মাশরাফির পাশাপাশি আল-আমিন হোসেনও নিশ্চিতভাবেই দলে থাকবে। রুবেল হোসেনেরও জায়গা পাওয়া নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা থাকার কথা ছিল না। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে শৃঙ্খলাজনিত সমস্যায় পড়ে যাওয়ায় ওকে নিয়ে দ্বিতীয় ভাবনাও এসে যাচ্ছে। এমনিতে কিন্তু ওর বোলিংয়েও উন্নতি লক্ষ্য করেছি আমি। জোরে বল করে। বাউন্সি উইকেট থেকেও সহায়তা পাবে। এতে করে বলের গতিও কিছুটা বাড়বে। কিন্তু শৃঙ্খলার কারণে যদি ওকে দলে না রাখার সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে ওর জায়গায় আসবে আবুল হাসান। সে ক্ষেত্রে আবুল হাসানের ব্যাটিং সামর্থ্যও গুরুত্ব পেয়েছে আমার কাছে।

অনেকে অবশ্য তরুণ তাসকিন আহমেদের কথা বলছেন। কিন্তু সমস্যা হলো ও ইনজুরিপ্রবণ। তা ছাড়া মাত্রই ইনজুরি থেকে ফিরে খুব বেশি ম্যাচও খেলা হয়নি ওর। প্রিমিয়ার লিগ খেলছে; কিন্তু ওটাকে খুব গুরুত্ব দিতে চাই না। লম্বা সফরে যাওয়ার জন্য পুরোপুরি ফিট কি না, এসবও ভাবতে হবে। ওকে তখনই দলে জায়গা দিতে রাজি, যদি শফিউল ইসলামকে একান্তই না পাওয়া যায়। এ মুহূর্তে কিছুটা ইনজুরি সমস্যা আছে শফিউলের। ওর লাইন লেন্থ যেমন ভালো, তেমনি মুভমেন্টও আছে। তা ছাড়া ব্যাটিংটাও জানে অল্পবিস্তর। ফিট থাকলে শফিউল অবশ্যই আমার দলে থাকবে।

অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে খেলা বলে নিজেদের মূল শক্তির কথা ভুলে গেলে হবে না। আমাদের শক্তির জায়গা হলো বাঁহাতি স্পিনার। বিশ্বকাপে তাই প্রতি ম্যাচে দুজন এমন স্পিনার খেলানোর বিকল্প দেখি না। সাকিব তো আছেই। ওর সঙ্গে আমি দলে নিচ্ছি তাইজুল ইসলামকে। আরাফাত সানিও বিবেচনায় ছিল। কিন্তু ওর ‘স্টাম্প টু স্টাম্প’ বোলিংয়ের চেয়ে তাইজুলকেই বেশি কার্যকরী মনে হচ্ছে আমার। কারণ ও ফ্লাইট দেয়। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে টেস্ট খেলছে। ওয়ানডে অভিষেকে হ্যাটট্রিকের অদ্বিতীয় কীর্তিতে এখন আত্মবিশ্বাসে টগবগ করেই ফোটার কথা ওর। আন্তর্জাতিক ম্যাচের উত্তাপও ওর গায়ে ভালোভাবে মাখা হয়ে গেছে এত দিনে। ও তাই আমার প্রথম পছন্দ। স্পিন বৈচিত্র্য বাড়ানোর জন্য জুবায়ের হোসেনকেও নিচ্ছি। ফ্লাইট দেওয়ার পাশাপাশি গুগলিটাও দারুণ মারে। আর অস্ট্রেলিয়ায় লেগস্পিনাররা সব সময়ই ভালো করে। একটু ব্যয়বহুল হলেও উইকেট তুলে দিতে পারে। যথাযথভাবে ব্যবহার করলে ব্যয়বহুল নাও হতে পারে।

ব্যাটসম্যানদের নিয়ে খুব বেশি ব্যাখ্যা দেওয়ার নেই। কারণ বেশির ভাগেরই দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন নেই। এদের মধ্যে ইমরুল কায়েসকে নিয়েছি ওপেনিং এবং ৩ নম্বর পজিশনের ব্যাকআপ হিসেবে। শামসুর রহমানের চেয়ে এ ক্ষেত্রে ওকে এগিয়ে রাখছি অভিজ্ঞতা ও অতীত পারফরম্যান্স বিবেচনায়। ২০১০ সালে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করা ওর সেঞ্চুরিটা তো এখনো আমার চোখে লেগে আছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান ম্যাচের জন্য করা আমার একাদশে অবশ্য ও থাকছে না। ভিন্ন কারণে রুবেলের যাওয়া না হলে ওর জায়গাটা নেবে আবুল।

শফিকুল হক হীরার বিশ্বকাপ স্কোয়াড
তামিম ইকবাল, এনামুল হক, মমিনুল হক, ইমরুল কায়েস, মাহমুদ উল্লাহ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, শুভাগত হোম, মাশরাফি বিন মর্তুজা, আরাফাত সানি, তাইজুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, জুবায়ের হোসেন এবং আল-আমিন হোসেন।

প্রথম ম্যাচের একাদশ : তামিম, এনামুল, মমিনুল, মাহমুদ উল্লাহ, সাকিব, মুশফিক, শুভাগত, মাশরাফি, তাইজুল, শফিউল ও রুবেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *