লাভলু মিয়া গাজীপুর সদর(গাজীপুর) থেকে: গাজীপুর: বাস ভাড়া নিয়ে বাক-বিতণ্ডার জের ধরে গাজীপুরে এক যাত্রীকে বাসের নিচে চাপা দিয়েছে এক বাসচালক। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ঈদে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফিরে আসা যাত্রী সালাউদ্দিন আহমেদ। গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায়
ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় স্কটেক্স অ্যাপারিয়াল কারখানার গাড়িচালকের কাজ করতেন নিহত সালাউদ্দিন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এতে বাসের ড্রাইভার, হেলপার, কন্ডাক্টর ও সুপারভাইজার- এই চারজনকে আসামি করা হয়েছে। সোমবার বিকালে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থেকে চালক রোকনউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে সকালে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ তার স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। দাফনের জন্য মরদেহ নেয়া হয়েছে ময়মনসিংহের ফুলপুর থানার শিলপুর গ্রামে। শিলপুরে নিহত সালাউদ্দিনের স্ত্রীর বাবার বাড়ি।
আর মারা যাওয়ার আগে ঢাকার আলুবাজারের সালাউদ্দিনের ইচ্ছায় দাফন করতে নেয়া হয় সেখানে।
নিহতের ভাই আবুল কালাম ও স্থানীয়রা জানান, রোববার স্ত্রীসহ সালাউদ্দিন ময়মনসিংহ থেকে আলম এশিয়া পরিবহনের বাসযোগে গাজীপুরের কর্মস্থলে ফিরছিলেন। পথে ভাড়া নিয়ে পরিবহনের সহকারীর সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সালাউদ্দিনকে মারধর করে এবং লাথি মেরে তাকে ফেলে দেবে বলে হুমকি দেয়। বাসটি বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলে ধাক্কা দিয়ে সালাউদ্দিনকে বাস থেকে ফেলে দেয়। কিন্তু তার স্ত্রীকে নিয়ে বাস চলে যেতে থাকে।
স্ত্রীকে না নামিয়ে বাস চলে যেতে থাকলে সালাউদ্দিন দৌড়ে বাসটির সামনে গিয়ে গতি রোধ করার চেষ্টা করেন। এ সময় চালক বাসটি সালাউদ্দিনের ওপর উঠিয়ে দেয় এবং দ্রুতগতিতে বাসটি নিয়ে সটকে পড়ে বলে দাবি নিহতের ভাই আবুল কালামের। এলাকাবাসী হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ফাঁসির দাবি করেছেন।
সোমবার সকালে হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনরা তার মরদেহ নিয়ে যান দাফন করতে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. প্রণয় ভূষণ দাস জানান, বাসের চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে বুক ও হাতের হাড় ভেঙে গিয়ে এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা গেছেন। তবে মৃত্যুর কারণ দুর্ঘটনাজনিত নাকি হত্যাজনিত তা চিকিৎসকদের নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, তা নিশ্চিত করতে হবে পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে।
এ বিষয়ে জয়দেবপুর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই জামাল হোসেন বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় চালকসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে এক্ষুণি তাদের নাম, পরিচয় জানানো যাচ্ছে না।
গাজীপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পিপিএম জানান, ময়মনসিংহ থেকে দুজন যাত্রী ফেরার পথে বাস ভাড়া নিয়ে বাক-বিতণ্ডার পর বাস থেকে নামার পর আক্রোশবশে বাসটি তার ওপর দিয়ে চালিয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলে সে মারা যায়। নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের পর আসামিদের গ্রেপ্তার করতে জোরালো তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এটা কোনো দুর্ঘটনার মামলা নয়, নেয়া হয়েছে হত্যা মামলা। হত্যা মামলা হিসেবে মামলার যে গুরুত্ব সেই গুরুত্ব দিয়েই আমরা কাজ করছি। আমরা চাই, যে ধরনের অপরাধ হয়েছে সে ধরনের অপরাধ হিসেবেই যেন চিহ্নিত হয় এবং আইনের আওতায় আনা হয়। আসামিদের দ্রুতই গ্রেপ্তার করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।
গাজীপুরের স্থানীয় স্কটেক্স অ্যাপারিয়াল কারখানার গাড়িচালক হিসেবে কাজ করতেন সালাউদ্দিন। আর তার স্ত্রী পারুল আক্তার কাজ করতেন অপর একটি পোশাক কারখানায়। রোববার ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা বাসের যাত্রী সালাউদ্দিনকে বাঘের বাজারে ফেলে দিয়ে স্ত্রী পারুলকে নিয়ে চলতে শুরু করে বাসটি। এ সময় সে কান্নাকাটি শুরু করলে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে নিয়ে বাসের গতি কমিয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘাতক বাসটিকে আটক করতে পারলেও পালিয়ে যায় চালক ও তার সহকারীরা।