ঢাকা: ঈদের কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে। দুর্দান্ত ত্বক আর চুলের জেল্লার জোরে স্পটলাইট কেড়ে নিতে চাইলে শেষ সময়ের তোড়জোড় প্রয়োজন এখন থেকেই। সারতে হবে সাজপ্রস্তুতিও এমনটিই পরামার্শ দিয়েছেন পারসোনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান।
পরিবারের সবাই মিলে হৈ হৈ আড্ডা, বাইরে ঘুরতে যাওযা, মেহমান থেকে রান্নার রণক্ষেত্র সামাল দেয়াÑ ঈদে কাজের তালিকার শুরু আছে, শেষ নেই। উৎসবের দিন বলে আরাম করে ছু্িটর দিন হিসেবে পার করার কোনো সুযোগই মিলবে না। বরং বাড়তি কসরত রয়েছে বিশেষ দিনগুলোর জন্য। সাজপোশাকে সব সময় ফিটফাট থাকতে হবে তো। আর ঈদে সাজবেন বলে তার মাত্র কয়েকদিন আগে মনস্থির করে বসে গেলেন আর কাজ হয়ে গেল, ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। তাই ঈদের স্পেশাল রূপচর্চা সময় থাকতে শুরু করে দিলেই ভালো।
এতে ঈদের সাজটাও হবে দেখার মতো। তার জন্যও চাই প্রস্তুতি। সমকালীন ট্রেন্ড ঘেটে তবেই সেট করতে হবে ঈদ মেকআপ লুক। মাথায় রাখতে হবে পোশাক, উপলক্ষ্য আর সময়টাও। সবশেষে যাচাই করে নিতে হবে পুরো লুকটা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কতটুকু মানাচ্ছে।
ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে একবার ফেশিয়াল করিয়ে নিতে পারলে ভালো হয়। চুলের যতেœও চলতে পারে হাইএন্ড সব হেয়ার ট্রিটমেন্ট। মুখের সঙ্গে মানিয়ে মানানসই হেয়ার কাট করিয়ে নিতে হবে ঈদের আগে। এতে নতুন হেয়ারস্টাইলের সঙ্গে নিজের সম্পূর্ণ লুক মানিয়ে নেয়ার সময় পাওয়া যাবে। যারা নতুন কোন হেয়ারস্টাইল ট্রাই করতে ইচ্ছুক নন তারা পুরানো স্টাইলই সামান্য টাচ আপ করিয়ে নিন। ট্রিমিং সেরে নেয়া যেতে পারে। যাদের হেয়ার কালার করা আছে তাঁরা কালার টাচ আপ করিয়ে নিতে পারেন। আর ঈদের কয়দিন আগে স্পাতে গিয়ে আপাদমস্তক স্পেশালাইজড ট্রিটমেন্ট সেরে নেয়া যায় ফ্রেশ দেখাবে। লাগবে সতেজ। তবে সেক্ষেত্রে সময় নিয়ে যাওয়া উচিত। তাড়া দিলে পুরো কাজটাই খারাপ হবে। হীতে বিপরীতটাও হয়ে যেতে পারে।
এতো গেল ঈদের আগের সার্বিক প্রস্তুতি। ঈদের কয়টা দিন কিভাবে সাজবেন সেটা কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঈদের চার পাঁচ দিন নানারকমভাবে সেজে দেখা যেতে পারে। তবে পোশাক, মেকআপ, হেয়ারস্টাইলÑ সবক্ষেত্রেই কিন্তু কমফর্টটাই শেষ কথা।
প্রথমেই স্টক চেক করে নেয়া প্রয়োজন। কোন কোন প্রসাধনী শেষ হয়ে গিয়েছে বা নতুন কিনলে ভালো হয় সেটা যাচাই-বাছাই করে নেয়া দরকার। ঈদের আগেই বিউটি বক্সে পুরে ফেলুন সব প্রয়োজনীয় সামগ্রী। রানওয়ে, রেড কার্পেট থেকে ম্যাগাজিনের পাতা ঘেটে সাম্প্রতিক সাজ প্রবণতা বের করে ফেলা এখন খুব কঠিন নয়। সেগুলোর সঙ্গে ব্যক্তিত্ব আর ব্যক্তিগত পছন্দের মিশেলে সেজে উঠুন এবারের ঈদে। সেজন্য এ বছরকার মেকআপ ট্রেন্ডগুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারনা থাকা চাই। এত করে লুক সাজানোর কাজটা সহজ হয়। সেজে ওঠা যায় ভিন্ন ভিন্ন রূপে।
বদলে গেছে বেইজ
শিশিরসিক্ত স্বাভাবিক সুন্দর ত্বকের সময় এ বছর। তাই নো মেকআপ মেকআপ লুকটাই প্রাধান্য পাবে বেজ তৈরির ক্ষেত্রে। তবে আরও তীব্র ভাবে। যেটুকু না করলেই নয়, শুধু সেটুকু মেকআপ ব্যবহার করে চেহারায় আবেদনময় আকর্ষণ তৈরি করাটাই হবে কাজ। কিন্তু দাগছোপ মুক্ত ঝলঝকে নিখুঁত যেন হয়। খুব বেশি কনট্যুর করার প্রয়োজন নেই ত্বক। বরং হাইলাইটারের উজ্জ্বলতা যেন যোগ হয়। আর ব্লাশন ব্যবহার অত্যাবশ্যক। ট্রেন্ডোমিটার তাই বলছে। আর্দি টোন থেকে পিচি পিঙ্ক ব্লাশ দিয়ে প্রাণ সঞ্চারন যেন হয় ত্বকে।
চোখচরিত
ক্লাসিক কালো চোখের দাপট থাকবে বছরজুড়ে। একদম সাদামাটা লাইন থেকে চোখের পুরোটা জুড়ে কাজল টানা ড্রামাটিক লুকের রমরমা থাকছে। কালোর পাশাপাশি নীলও হয়ে উঠবে জনপ্রিয়। রহস্যমোদির আই মেকআপের জন্য দারুন অপশন এটি। চোখের পাতার পুরোটায় কিংবা লাইন ঘেঁষে, এমনকি ল্যাশও রঙিন হয়ে উঠতে পারে নীলে। থাকবে পিঙ্ক, পার্পল, অরেঞ্জ এর মত শেডগুলোও। রঙের বৈচিত্র্যের পাশাপাশি পাল্টে গেছে আইলাইনারের টানের পদ্ধতি। ক্যাটলাইন আর গ্রাফিক আর্ট তো ছিলই তালিকায় যোগ হয়েছে ফ্রি স্টাইল অ্যাবস্ট্রাক্ট আইলাইনারও। গ্লিটার, শিমার আইশ্যাডোর সঙ্গে ট্যানড, কালার ব্লক আর স্মোকিতেও সাজানো হবে চোখের পাতা। একদম মাসকারাবিহীন লুক যেমন থাকছে কালারড মাসকারাও।
ওষ্ঠ সজ্জায়
নো মেকআপ মেকআপ লুকের সঙ্গে মানিয়েই ট্রেন্ডে সেট হয়েছে বোল্ড লিপস্টিকের শেডগুলো। ম্যাজেন্টা রেড, ব্রাইট ফুশিয়া থেকে কালো আর নীলও তাই ঠোঁটে মেখে নিতে পারবেন অনায়াসে। লালের বিভিন্ন শেডের আলাদা কদর থাকবে বছরজুড়ে। থাকবে ওয়াইন লিপসও। তাই বলে যে ন্যুডের বাজার কমবে তা কিন্তু নয়। ম্যাট শেডের মভ, ট্যান, ক্যারামেল কিন্তু কোথাও যাচ্ছে না। জাস্ট বিটেন কিংবা কিসড লুক তৈরি করা হবে ন্যুড শেডগুলো দিয়ে। লিপস্টিকের ফর্মুলাতেও থাকছে নতুনত্ব। পাউডারি, স্টেইন আর গ্লসের নাম থাকবে তালিকার শীর্ষে। এদের সঙ্গত দেবে শিমার আর গ্লিটারও।
কেশে কেতাদুরস্ত
সাম্প্রতিক সৌন্দর্যপ্রবণতার প্রভাবে পুনরায় পাল্টে গেছে কেশের বেশ। তো অপেক্ষা কিসের? আরামদায়ক, সাহসী ও স্টাইলিশÑ এসব কাটে কেটে নিন চুল। পাল্টে ফেলুন পুরোনো আর একঘেয়ে লুক।
হেয়ারকাট ট্রেন্ডে এসেছে দারুণ সব পরিবর্তন। যার শীর্ষে জ’ লাইন বা মিডলেন্থ ববের অবস্থান। গেল বছরের মতো এবারও থাকবে ব্লান্ট জ’ লাইন বব। কিন্তু এমনভাবে কাটা চাই, যেন কানের পেছনে গুঁজে দিলে তা এ-লাইন ববের ইফেক্ট দেয়। চুলকে ঘন দেখাতে দারুণ অপশন এটি। সোজা চুলে সবচেয়ে ভালো দেখায়, তবে ঢেউখেলানো বা কোঁকড়া চুলেও কেটে নেওয়া যাবে অনায়াসে। মানিয়ে যায় সব ধরনের ফেস শেপে। আরও আধুনিক ও স্বতন্ত্র লুক চাইলে ববের সঙ্গে জুড়ে দিতে পারেন ব্যাঙস। এতে চেহারায় বাড়তি ফ্রেম যোগ হবে। চুল কার্লি হলে খুব বেশি ছোট করা যাবে না ব্যাঙস। তবে যাদের চুল সোজা, তারা দৈর্ঘ্য নিয়ে নিরীক্ষা করতে পারেন পছন্দ অনুযায়ী। চুল ছোট রাখতে স্বচ্ছন্দ হলে শুধু ব্যাঙস কেন, চুল কেটে নিতে পারেন পিক্সি কাটে। নব্বইয়ের গ্রোন আউট পিক্সি এবারে ট্রেন্ডের শীর্ষে। এর বিশেষত্ব হচ্ছে দুই পাশে ছোট রেখে মাথার ওপরের চুল চপি লেয়ারে কেটে নেওয়া হয়। পিক্সির সঙ্গে অ্যাসিমেট্রিক্যাল আন্ডারকাটেও চুল কেটে নেওয়া যেতে পারে। যারা এত ছোট চুলে স্বচ্ছন্দ নন, তাদের জন্য রয়েছে সত্তর স্টাইলের শ্যাগ। তবে নতুন চমক নিয়ে। ব্লান্ট ব্যাঙস সমেত। কলার বোন পর্যন্ত লম্বা চুল আর আইব্রো ছোঁয়া ব্যাঙস-এর বিশেষত্ব। চুল আরও বড় রাখতে চাইলে এ বছরের ট্রেন্ড লং হুইস্পি লেয়ার। যা চুলে ভলিউমের সঙ্গে যোগ করবে বাড়তি মুভমেন্ট। সোজা, ঢেউ খেলানো, কোঁকড়াÑ সব ধরনের চুলে কেটে নেওয়া যাবে অনায়াসেই। এবারের বিভিন্ন স্টাইলের ফ্রিঞ্জ রয়েছে ট্রেন্ডে। বেবি, কার্টেন, বারডট হুইস্পির মতো ফ্রিঞ্জগুলো জুড়ে দেওয়ার ট্রেন্ড থাকবে বছরজুড়ে। আর যারা চুল রাঙাতে চানÑ বেছে নিতে পারেন লাইলাক কিংবা রিচ কপারের শেডগুলো। অ্যাশি সিলভার, স্ট্রবেরি হানি, মাশরুম ব্রাউনও কিন্তু করা যাবে অনায়াসে। আর স্টাইলিংয়ের ক্ষেত্রে ব্রেইড আর বানকে হটিয়ে শীর্ষস্থান পনিটেইলের দখলে। তা-ও আবার যেনতেন স্টাইলে নয়। চুড়োয় বাঁধা পনিটেইল। জেল বা তেল দিয়ে টেনে করা সিøক আপডুর দাপট থাকবে এ বছরও। সঙ্গে লুজ লেট ডাউন কার্লও করে নেওয়া যাবে পছন্দ অনুযায়ী।
ছেলেদের চুলের ট্রেন্ডে এসেছে পরিবর্তন। সিøক ব্যাক হেয়ার হয়ে উঠেছে ম্যাট এবং মেসি। ফেড হেয়ারস্টাইলের জায়গা দখল করে নিয়েছে টেপারড স্টাইল। জনপ্রিয়তা বেড়েছে শর্ট হেয়ারস্টাইলেরও। স্পাইক স্টাইল, টেক্সচারড ক্রপ ছাড়াও শর্ট মেসি লুক থাকবে ট্রেন্ডে। শেভড হেয়ারলাইন, মডার্ন মুলেট আর মোহকও কিন্তু বাদ পড়ছে না তালিকা থেকে। যারা চুল ছোট রাখতে চান, তারা অনায়াসেই বেছে নিতে পারেন ক্লিন কাটের আলট্রা শর্ট টেক্সচারড হেয়ার। চাইলে ফ্রিঞ্জ জুড়ে নিতে পারেন সঙ্গে। পাশে ছোট করে ছাঁটা লুজ পম্প স্টাইলও দারুণ দেখাবে। যাদের চুল কার্লি, তারা টেক্সচারড ক্রপ স্টাইলের সঙ্গে ড্রপ ফেড করে চুলে কেটে নিতে পারেন। চমক দিতে পারেন শেভড লাইন যোগ করে।
স্পাইক আবার ফিরেছে ট্রেন্ডে। ফাইন থেকে ফুল স্পাইক, স্পাইকি কুইফ আর ফেডেড স্পাইক থাকছে তালিকায়। ক্রপের সঙ্গে যোগ হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাঙস। লেয়ারড ব্লান্ট, ডায়াগনাল, জ্যাগড-এর মতো ব্যাঙস রয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। যাদের চুল মাঝারি থেকে লম্বা, তারা কেটে নিতে পারেন মুলেট আর মোহক। মেসি ভাব ছাড়াও এতে যোগ করে নিন টেম্পল ফেড, টেপারড সাইড বা লং সাইড ফ্রিঞ্জ। সিøক ব্যাক স্টাইলে টেনে আঁচড়ে রাখলে দারুণ দেখাবে। সঙ্গে যদি টাসলড কিংবা মেসি টেক্সচার করে নেওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই।