হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটে যৌতুকের দাবিতে খুরশিদা আক্তার ইভা (২৩) নামে এক গৃহবধূকে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্বামী হাছান আল হাবিবের (২৮) বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের সময় ওই গৃহবধূর বড় ভাইকে ফোন করে বোনের কান্না শোনানো হয়েছে। বর্তমানে ওই গৃহবধূ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় গত শুক্রবার লালমনিরহাট সদর থানায় হাছান আল হাবিবসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
আহত খুরশিদা আক্তার ইভা রংপুরের পীরগাছা উপজেলার গুয়াবাড়ী এলাকার ইউসুফ আলীর মেয়ে। তার স্বামী হাছান আল হাবিব লালমনিরহাট শহরের সাপটানা এলাকার আব্দুস ছাত্তারের ছেলে। ২০১৪ সালে তাদের বিয়ে হয়।
সোমবার সদর হাসপাতালে গিয়ে খুরশিদা আক্তার ইভার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, রংপুরের বেগম রোকেয়া কলেজ থেকে বাংলা বিষয়ে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে গত ২৭ মে বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি লালমনিরহাটে যান তিনি।
গত ৩০ মে তার স্বামী দুই বোনের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে শিশুসন্তান হাসিন আল জাবিরকে (১৪ মাস) কোলে নিয়ে বাড়ির বাইরে গেলে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসে। এ সময় তাদের গালি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে তাকে চুলের মুঠি ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে মারধর করা হয়। ওই দিন বিকেলে তার বড় ভাই হাবিবুর রহমান ও লালমনিরহাট থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
খুরশিদা আক্তার ইভা বলেন, ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর যৌতুকের জন্য স্বামী হাছান আল হাবিব আমাকে নির্যাতনের একপর্যায়ে কোমরে লাথি দিলে আমার প্রথম সন্তানটি নষ্ট হয়ে যায়। এরপরও নির্যাতন সহ্য করে সংসার করে আসছি।
ইভার বড় ভাই মামলার বাদী হাবিবুর রহমান বলেন, হাছান আল হাবিবসহ তিনজনের নামে লালমনিরহাট সদর থানায় মামলা করেছি। বোনের চিকিৎসা চলছে। আমরা আদালতের মাধ্যমে এই নির্যাতনের বিচার চাই।
তিনি বলেন, বিয়ের সময় বোনের সুখের জন্য ৩ লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছি। আরও ২ লাখ টাকা যৌতুকের জন্য বিভিন্ন সময় আমার বোনকে নির্যাতন করে আসছিল হাবিব। গত ৩০ মে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়। এ কারণে মামলা করেছি।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ৩০ মে বেলা ১১টার দিকে হাছান আল হাবিব তার দুই বোনের পরামর্শে দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য ইভাকে নির্যাতন করেন। শরীরের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি একপর্যায়ে ইভার স্পর্শকাতর স্থানগুলোতেও নির্যাতন করা হয়।
এ সময় ইভার বড় ভাই হাবিবুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তার ছোট বোনের কান্নার শব্দ শোনানো হয়। ইভা গত ৩০ মে থেকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
লালমনিরহাট সদর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আমিনুর রহমান বলেন, গুরুতর আহত খুরশিদা আক্তার ইভাকে স্পেশাল চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাছাড়া মারপিটের কারণে শরীরে বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে কালো দাগ পড়েছে।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম বলেন, ইভা নামে ওই গৃহবধূকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।