জুবায়ের হোসেন হতে পারে ‘রহস্য বালক’

খেলা

pic-06_166357অতীতে অনেক তরুণ ক্রিকেটারের নামের পাশেই ‘ওয়ান্ডার বয়’ বা ‘বিস্ময়বালক’ বিশেষণটি বসতে দেখেছি। আমার বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া এক তরুণকেও আমি একই বিশেষণে বিশেষায়িত করতে চাচ্ছি। জিম্বাবুয়ে সিরিজে যেভাবে নিজের বোলিং কারিকুরি দেখিয়েছে, তার ভিত্তিতে মনে হচ্ছে জুবায়ের হোসেন হবে বিশ্বকাপের ‘মিস্ট্রি বয়’ বা ‘রহস্য বালক’। জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরাই কেবল ওকে খেলেছে। এ ছাড়া অন্যান্য ভিনদেশি ব্যাটসম্যানদের কাছে ও এখনো অতটা পরিচিত নয়। আশা করি, বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের সে বেশ ভোগাবে।

এটা ঠিক যে লেগ স্পিনাররা একটু খরুচে হয়। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে ওরা দলকে উইকেটও নিয়ে দেয়। জুবায়েরের সুবিধার দিক হবে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটের পেস এবং বাউন্স। যেখানে লেগ স্পিনারদের সাফল্যের সম্ভাবনা সব সময়ই বেশি থাকে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে উইকেট তুলে না নিলে ম্যাচের চাপ প্রতিপক্ষের দিকে ঠেলে দেওয়া যায় না। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নেওয়া গেলে তাই প্রতিপক্ষকে অল্প রানে যেমন আটকে দেওয়া যাবে, তেমনি ম্যাচ জেতার সুযোগও তৈরি হবে বহুলাংশে। উপরন্তু উপমহাদেশের বাইরের দলগুলো নিয়মিত ভালো মানের লেগ স্পিনারদের খেলে অভ্যস্তও নয়। জিম্বাবুয়ে হোম সিরিজে জুবায়ের যেমন বোলিং করেছে, তাতে আমি আশাবাদী। সেই সঙ্গে অধিনায়কও যদি ওকে উৎসাহ ও বাহবা দিয়ে আরো অনুপ্রাণিত করতে পারে, তাহলে বিশ্বকাপের ‘ম্যাজিক বয়’ হিসেবে সে আবির্ভূত হতে পারে। বিশেষণের ব্যবহার কি একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে? চাচ্ছি, জুবায়ের প্রমাণ করুক যে আমি বাড়াবাড়ি করছি না।

আরেকজন নবীনকে নিয়েও আমি খুব উচ্ছ্বসিত। সে তাইজুল ইসলাম। ওর বোলিংয়ের লক্ষণীয় দিকটি হলো, বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে সে যথেষ্ট ফ্লাইট দিয়ে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করতে কার্পণ্য করে না। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজে ওর যা পারফরম্যান্স এবং ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে অভিষেকেই হ্যাটট্রিকের যে রেকর্ড, তা নিঃসন্দেহে ওকে বেশ উজ্জীবিত রাখবে। ওকে উৎসাহ দিয়ে কতটা ভালো পারফরম্যান্স আদায় করে নেওয়া যায়, সেটা নির্ভর করবে অধিনায়কের ওপর। অন্য আরেকটি ব্যাপারও তাইজুলকে দলে রাখার বিষয়ে আমাকে উৎসাহী করেছে। আমাদের মূল স্পিনার অবশ্যই সাকিব আল হাসান। তাইজুলকে নিয়ে বাঁহাতি স্পিনার দুজন হয়ে গেলেও এখানে বৈচিত্র্যও থাকছে। এ দুজনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো, লাইন ও লেন্থ ঠিক রেখে বোলিং করা সাকিবের মূল অস্ত্র আর্ম বল। সেই সঙ্গে মাঝেমধ্যে বাড়তি টার্নের ওপর নির্ভর করে সে বোলিং করে থাকে। সাকিবের সঙ্গে তাইজুলের পার্থক্য হলো ফ্লাইট দেওয়ায়। এ ছাড়া মোটামুটি দীর্ঘকায় স্পিনার হওয়াটা তাইজুলকে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে বাড়তি বাউন্স পেতে সহায়তা করবে।

দল গড়ার সময় বিবেচনায় থাকলেও আরাফাত সানিকে শেষ পর্যন্ত রাখতে পারিনি অস্ট্রেলিয়ার উইকেটের কথা ভেবেই। সেসব উইকেটে ওর মতো খাটো বোলারের পক্ষে বাউন্স পাওয়া কঠিন। তা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় বল নিচুও হবে না, যে সুবিধাটা আমাদের দেশের উইকেটে আরাফাত পেয়েছিল। তাইজুল এগিয়ে গেছে ওর উচ্চতা এবং লুপ দেওয়ার ক্ষমতার কারণে। বোলিংয়ে বাড়তি বৈচিত্র্যের জন্য জুবায়েরকে নেব বলে ঠিক করে রাখায় তাইজুল ও আরাফাতের মধ্যে শেষেরজনকে ছেঁটে ফেলতেই হলো। এবার পেস বোলিং আক্রমণের দিকে চোখ ফেরানো যাক। একটি কথা পরিষ্কার করে বলে রাখা ভালো। কোনো সন্দেহ নেই যে দলের অন্যতম সেরা বোলার রুবেল হোসেন। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে এই মুহূর্তে ওকে দলে রাখা সম্ভব হলো না। কারণ সব কিছুর আগে শৃঙ্খলা। ওর জায়গায় আবুল হাসানকে নিয়ে নিলাম। ইনজুরি থেকে ফিরে ঘরোয়া ক্রিকেটে ওকে বেশ জোরেই বল করতে দেখলাম। তা ছাড়া লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবেও দলের জন্য অবদান রাখার ক্ষমতা ওর আছে।

অনভিজ্ঞ হলেও বলের গতি ও আক্রমণাত্মক মানসিকতার কারণে তরুণ তাসকিন আহমেদও আমার দলে জায়গা করে নিয়েছে। ওর গতি ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটারের আশেপাশে। যা অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের স্বস্তিতে থাকতে দেবে না। এখন ইনজুরিতে থাকলেও শফিউল ইসলাম যথাসময়ে ফিট হয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস। পুরোপুরি সুস্থ শফিউলকে দলে রাখতে হচ্ছে কারণ ওর অভিজ্ঞতা এবং স্ট্রেট আর্ম বোলিং অ্যাকশন অস্ট্রেলিয়ার অপেক্ষাকৃত ফাস্ট ও বাউন্সি উইকেটে ওকে যথেষ্ট সুবিধা দেবে। তা ছাড়া দুই দিকেই বল সুইং করানোর ক্ষমতাও ওর দলে থাকার অন্যতম কারণ। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা অপেক্ষাকৃত কমজোরি বোলার হলেও পেস বোলিংয়ের আর্ট ও স্কিল- দুটোই ওর বেশ ভালো রপ্ত করা। যেমন সঠিক জায়গায় বল করার পাশাপাশি দুদিকেই সুইং করাতে পারে। সেই সঙ্গে মাঝেমধ্যে স্লোয়ার দিয়ে ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করার গুণাবলিও বাংলাদেশ দলের সাফল্যে ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে অধিনায়ক হিসেবে প্লেয়ার ম্যানেজমেন্ট, বোলিং পরিবর্তন ও শেষের দিকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ওর দক্ষতাও দলের জন্য প্লাস পয়েন্ট।

নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন যে আমি খেলোয়াড় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বহুমুখী দক্ষতাকে প্রাধান্য দিয়েছি। আবুল হাসানকে যেমন নিয়েছি পেসার কাম ব্যাটসম্যান হিসেবে। ওপেনিংয়ে তামিম ইকবাল ও এনামুল হকের ব্যাকআপ হিসেবেও তেমনি নিচ্ছি একজন ব্যাটসম্যান কাম পেসারকে। পেস বোলিং করতে জানাই এ ক্ষেত্রে ইমরুল কায়েস কিংবা শামসুর রহমানের চেয়ে এগিয়ে দিয়েছে সৌম্য সরকারকে। দীর্ঘকায় এ ওপেনিং ব্যাটসম্যান বেশ আক্রমণাত্মকও। ‘স্কয়ার অব দ্য উইকেট’ শট অর্থাৎ স্কয়ার কাট, হুক ও পুল ভালো খেলে। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনের জন্য যা খুবই উপযোগী। একজন পেসার কম নিয়ে খেললেও ওই জায়গাটায় ওকে ব্যবহার করা যাবে। প্রয়োজনে এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে চতুর্থ পেসার হিসেবে কাজে লাগানোর সুযোগও থাকছে। লোয়ার মিডল অর্ডারে আমার প্রথম পছন্দ সাব্বির রহমান। একদিকে যেমন চৌকস ব্যাটসম্যান, তেমনি বাংলাদেশের সেরা ফিল্ডারও, যে কিনা বিশ্বকাপের কন্ডিশনে খুব ভালোভাবে দলের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। ওর ব্যাকআপ হিসেবে আমি বাজে ফর্মের কারণে বাদ পড়া নাসির হোসেনকেও দলে ফেরাচ্ছি। ইদানীং ঘরোয়া ক্রিকেটে কিছু রান করা এ ব্যাটসম্যানের অভিজ্ঞতাও তো ফেলনা নয়।

রকিবুল হাসানের বিশ্বকাপ স্কোয়াড

তামিম ইকবাল, এনামুল হক, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মাহমুদ উল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, মমিনুল হক, সাব্বির রহমান, তাইজুল ইসলাম, জুবায়ের হোসেন, মাশরাফি বিন মর্তুজা, শফিউল ইসলাম, আবুল হাসান, তাসকিন আহমেদ ও নাসির হোসেন।

প্রথম ম্যাচের একাদশ : তামিম, এনামুল, মমিনুল, মাহমুদ উল্লাহ, সাকিব, মুশফিক, সাব্বির, মাশরাফি, শফিউল, আবুল ও জুবায়ের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *