কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রথম নারী শিক্ষক, ভাষা সৈনিক অধ্যাপক লায়লা নূর আর নেই। শুক্রবার সকাল সোয়া ৯টায় কুমিল্লা নগরীর একটি হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৫ বছর। তার নিকটজন আবদুল কাদের জিলানী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি ১৯৩৪ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আবু নাসের মো. নুরুল্লাহ। মাতা সামছুন্নাহার মেহেদী।
৩ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি ২য়। পিতা ছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের জামশেদপুরে অবস্থিত টাটা স্টিল কোম্পানির প্রকৌশলী। সেখানেই তার বেড়ে উঠা। কুমিল্লায় এসে তিনি ১৯৪৮ সালে মেট্রিক পাশ করেন। ইন্টারমিডিয়েট, ডিগ্রি পাশ করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে। মাস্টার্স সম্পন্ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
অধ্যাপক লায়লা নূর ২০১৬ সালে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। সবার সাথে আমতলায় গিয়েছিলেন ভাষার দাবি জানাতে। সিপাহীরা ট্রাকে করে সেখানে গিয়ে লাঠিচার্জ শুরু করে। কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়। তিনি ও তার সহপাঠি হোসনেয়ারাকে ধরতে আসলে তিনি বলেন, গায়ে হাত দিবেন না। কোথায় যেতে হবে, ‘বলুন’। তাদের আর্মির ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাগ থানায়। সেখানে সারা দিন বসিয়ে রেখে সন্ধ্যায় পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। কারাগারে তাদের ২১ দিন আটকে রাখা হয়।
তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রথম নারী শিক্ষক। সেখানে ১৯৫৭ সাল থেকে একটানা ৩০ বছর শিক্ষকতা করেন।
লায়লা নূর বলেছিলেন, অন্য সব আন্দোলনের মতো ভাষা আন্দোলনেও ছাত্ররা নেতৃত্ব দিয়েছিলো। এ দেশের মানুষ ছাত্রদের খুব বিশ্বাস করতো। এখনকার মতো তখন ছাত্ররা হানাহানি আর অশুভ কাজে জড়িত থাকতো না। তিনি বাংলা ভাষাকে উচ্চ আদালতে ব্যবহারের দাবিও জানিয়েছিলেন। যে ভাষার জন্য মানুষ রক্ত দিযেছে সে ভাষাকে অবহেলা করা ঠিক নয়। আমার ফাঁসি হচ্ছে-অথচ আমি জানি না রায়ে কি লেখা হয়েছে!