কলকাতা: ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ৫৮ জনের নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে। এই নতুন মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ ১৯ জন। আর নারী মন্ত্রী হয়েছেন মাত্র ৬ জন। প্রথম সাংসদ হয়েই মন্ত্রী হয়েছেন ৬জন। এর মধ্যে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ থেকে নির্বাচিত দেবশ্রী চৌধুরি। গতবার এই সংখ্যাটি ছিল ৮জন। মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু মুখ মাত্র ১ জন। তিনি হলেন মুক্তার আব্বাস নকভি।
তিনি গতবারও মন্ত্রী ছিলেন। এবারের মন্ত্রিসভায় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার সাংসদের থেকে ১৯ শতাংশকে মন্ত্রী করা হেেছ। গতবার ছিল ১৭.৪ শতাংশ। এবারের মন্ত্রীদের মধ্যে ৫৩ জনই বিজেপির, একজন সাবেক কূটনীতিবিদ। শরিক দলগুলি থেকে এবার মাত্র ৪ জন মন্ত্রী হয়েছেন। এনডিএ-র শরিক দলগুলির মধ্যে সংযুক্ত জনতা দল, এডিএমকে ও আপনা দল এবারের মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে রাজি হয় নি।
গত মন্ত্রিসভার হেভিওয়েট মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত সাবেক অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ অসুস্থতার কারণে মন্ত্রিসভায় আসতে রাজি হন নি। তবে বাদ পড়েছেন মানেকা গান্ধী, সুরেশ প্রভু, জয়ন্ত সিনহা, রাজ্যবর্ধন রাঠোরে, জুয়েল ওরাঁও, মহেশ শর্মা, রাধা মোহন সিং, অনুপ্রিয়া প্যাটেল ও জেপি নাড্ডার মত হেভিওয়েটরা। অবশ্য জেপি নাড্ডাকে বিজেপির সভাপতি করার ভাবনা চিন্তা চলছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী গত মন্ত্রিসভার ৪৪ শতাংশ মন্ত্রীকেই বাদ দিযেছেন। জানা গেছে, জাতপাতের অঙ্ক ও আঞ্চলিক ভারসাম্য বজায় রেখেই মন্ত্রিসভার সদস্য বাছাই করা হয়েছে। তবে আগামী দিনে মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল।
২০১৪ সালে মোদী প্রথম সরকার গঠন করেছিলেন ৪৬ জনকে নিয়ে। এর মধ্যে পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন ২৪ জন, স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ১০ জন এবং প্রতিমন্ত্রী ছিলেন ১২ জন। পরে অবশ্য মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেয়ে ৭১-এ পৌঁছেছিল। এবার ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী, ৯জন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২৪ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে মন্তিসভা গঠিত হয়েছে। তবে লোকসভার সদস্যসংখ্যার বিচারে মন্ত্রিসভার আয়তন ৮১ পর্যন্ত (১৯ শতাংশ) বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। এবারের মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে বেশি মন্ত্রী হয়েছেন হিন্দি বলয় বলে পরিচিত রাজ্যগুলি থেকে। মোট ৩১ জন এই হিন্দি বলয় থেকে মন্ত্রী হযেছে। আর রাজ্যগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি মন্ত্রী হয়েছেন উত্তর প্রদেশ থেকে ৯ জন। এরপরেই বেশি মন্ত্রী হয়েছেন মহারাষ্ট্র থেকে ৮ জন। এবারের মন্ত্রিসভায় ১৫টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই।
জানা গেছে, মন্ত্রিসভার সদস্যদের ৯০ শতাংশই কোটিপতি। সবচেয়ে ধনী মন্ত্রী হলেন হরসিমরাত কাউর বাদল। তার সম্পদের পরিমাণ ২১৭.৯ কোটি রুপি। আর সবচেয়ে গরীব মন্ত্রী হলেন প্রতাপ চন্দ্র সারেঙ্গি। তার সম্পদের পরিমাণ মাত্র ১৩ লক্ষ রুপি। মন্ত্রিসভার সবচেয়ে কনিষ্ঠতম সদস্য হলেন ৩৫ বছরের কৈলাশ চৌধুরি এবং সবচেয়ে প্রবীন মন্ত্রী হলেন ৭২ বছরের রামবিলাস পাশোয়ান। মন্ত্রিসভার মাত্র ১০ জন মন্ত্রীর বয়স ৫০ বছরের নীচে। বাকীদের বয়স ৫১ থেকে ৭২ বছরের মধ্যে। রামবিলাস পাশোয়ান ১০বার সাংসদ হয়ে রেকর্ড করেছেন। অন্যদিকে সন্তোষ গাঙ্গোয়ার ৭ বার সাংসদ হয়েছেন।
গত বৃহষ্পতিবার রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে এক রাজকীয় অনুষ্ঠানে প্রায় ৮ হাজার অতিথির উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ প্রধানমন্ত্রী সহ মন্ত্রিসভার সকলকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন। আজ সন্ধ্যায় বসবে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক। এর পরেই জানা যাবে কে কোন মন্ত্রক পেলেন। আগামী ৬ জুন বসবে ১৭তম লোকসভার প্রথম অধিবেশন । চলবে ১০দিন। এদিকে প্রোটেম স্পীকার হিসেবে মানেকা গান্ধীর নাম শোনা যাচ্ছে। তিনিই নতুন সব সাংসদকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত ২২ জন সদস্য দলনেত্রীর নির্দেশে বাংলায় শপথ নেবেন বলে জানা গেছে।