চট্টগ্রাম: তুচ্ছ কারণে গুলি ছুড়তে দ্বিধা করতেন না। ঠান্ডা মাথায় খুন করে শৌচাগারে লাশ রেখে গানও শুনতেন। লাশের পরিচয় মুছে দিতে টুকরো টুকরো করে গলাতেন অ্যাসিডে। এমনই ভয়ংকর খুনি ছিলেন অমিত মুহুরী। গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আরেক বন্দীর ইটের আঘাতে আহত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
নগরের নন্দনকানন, সিআরবি, নিউমার্কেট ও ডিসি হিল এলাকায় ছিল তাঁর দাপট। নন্দনকাননে পুলিশ ফাঁড়ির কাছেই ছিল তাঁর টর্চার সেল।
চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার বাইন্না পুকুরপাড় এলাকার অরুণ মুহুরীর দুই ছেলের মধ্যে অমিত বড়। ২০১০ সালে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ২০১৩ সালে কোটি টাকার দরপত্র নিয়ে সিআরবি এলাকায় জোড়া খুনের পর অমিতের নাম আলোচনায় আসে। সর্বশেষ ২০১৭ সালে বন্ধুকে খুনের ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর নিজের ফ্ল্যাট ছেড়ে পালিয়ে যান অমিত। ২ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার একটি মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্র থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। অমিত কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ–অর্থবিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১২ সালে নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় বন্ধু মো. রাসেলকে ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে আহত করেন অমিত। নারীঘটিত বিষয়ে দুজনের মধ্যে মতবিরোধ হয়। ঘটনার এক মাস পর রাসেল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর অমিত পালিয়ে থাকেন। জামিনে এসে আবার অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। পরের বছরের ২৩ জুন নগরের সিআরবি এলাকায় রেলের কোটি টাকার দরপত্র নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী সাজু পালিত ও শিশু মো. আরমান নিহত হন। এই ঘটনায় করা মামলায় অমিতসহ ৬০ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আবার জামিনে বেরিয়ে আসেন তিনি।
অমিত মুহুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ২০১৩ সালে জোড়া খুনের পর অমিত আলোচনায় আসেন নগরের নন্দনকাননে পুলিশ ফাঁড়ির কাছে অমিতের টর্চার সেল ছিল
বুধবার রাতে কারাগারে আরেক বন্দীর হাতে অমিতের মৃত্যু হয় নগরের নন্দনকানন এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে চালু করেন টর্চার সেল। ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট এই ফ্ল্যাটে অমিত নিজের বন্ধুকে মারধরের পর ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে লাশ চার দিন ধরে ফেলে রাখেন। এরপর লাশ ড্রামের ভেতর ঢুকিয়ে অ্যাসিড ঢালেন। পরে ইট, বালু, সিমেন্ট ও চুন দিয়ে ড্রামের মুখ ঢালাই করে ফেলে দেন আধা কিলোমিটার দূরের এক দিঘিতে। ওই বন্ধুর সঙ্গে অমিতের স্ত্রীর সম্পর্ক থাকতে পারে, এমন সন্দেহে খুনের ঘটনাটি ঘটে বলে জানায় পুলিশ। ওই বছরের ১৩ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের এনায়েতবাজার এলাকার রানীরদিঘি এলাকা থেকে একটি ড্রাম উদ্ধার করে পুলিশ। ড্রাম কেটে ভেতর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ গলে যাওয়ায় তখন পরিচয় বের করা যায়নি। ৯ আগস্ট নন্দনকানন হরিশ দত্ত লেনের বাসায় ইমরানুলকে ডেকে নিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। লাশটি বাসার শৌচাগারে রেখে গান শুনতেন অমিত।
ঘটনার শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করেন কোতোয়ালি থানার এসআই হারুন অর রশিদ। আদালতে দেওয়া এ মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, অমিত একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। নগরের হাজারী গলি থেকে অ্যাসিড আনা হয়। পরিকল্পনামতো অ্যাসিড ও চুনাপাথর ড্রামের ভেতর ঢেলে দেওয়া হয়। লাশের চিহ্ন না রাখতে ড্রামের মুখে সিমেন্ট ও বালু দিয়ে ঢালাই করে দেওয়া হয়। পরে ভ্যান গাড়িতে করে লাশভর্তি ড্রামটি নগরের রানীরদিঘিতে ফেলে দেওয়া হয়।
ইমরানুলের ভাই ইরফানুল করিম বলেন, ভাই হত্যার প্রধান আসামি অমিতকে নৃশংসভাবে মেরে ফেলেছেন আরেক আসামি। একের পর এক খুন করে অমিতের শেষ পরিণতি ভালো হয়নি।
এর আগে ওই বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ইয়াছিনের মোটরসাইকেলটি কেড়ে নেন অমিত। এর জের ধরে ইয়াছিনকে খুন করা হয়। প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রলীগ নেতাকে গুলি করেন।