গ্রাম বাংলা ডেস্ক: আজ শুক্রবার ১৪ শাবান দিবাগত রাত পবিত্র শবেবরাত, যা লাইলাতুল বারাত বা ভাগ্যরজনী নামেও পরিচিত। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ব্যক্তি, জাতি ও দেশের ভাগ্য নির্ধারণ এবং গুনাহ মাফ করে দেন মর্মে কোনো কোনো বর্ণনা থেকে জানা যায়।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নফল রোজার পাশাপাশি, নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, কবর জিয়ারত, জিকির, বিশেষ দোয়া, আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে রাতটি অতিবাহিত করে থাকেন। অনেকে গরিবদের মাঝে হালুয়া রুটি, মিষ্টি ইত্যাদি বিতরণ করেন। করেন দান সদকাহ। শবেবরাত উপলক্ষে কাল শনিবার সরকারি ছুটি।
শবেবরাত ফার্সি শব্দ। শব অর্থ রাত, বরাত অর্থ ভাগ্য। এ জন্য অনেকে একে ভাগ্যরজনী বলে থাকেন। আবার একে অনেকে লাইলাতুল বারাতও বলে থাকেন। যার শাব্দিক অর্থ মাগফিরাত বা মুক্তির রাত। পাক-ভারত উপমহাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে শবেবরাত পালন করা হয়। এ রাতে সবার ভাগ্য নির্ধারিত হয় এবং আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করেন এ বিশ্বাস পোষণ করা হয়।
শবেবরাতের ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে সরাসরি কোনো নির্দেশনা নেই। হাদিস শরীফ থেকে জানা যায়, রাসূল সা: মধ্য শাবানের রাতে নামাজ আদায় ও দিনে রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের একটি সূরায় ‘লাইলাতুল মোবারাকাহ’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়েছে Ñ ‘এটা সে রাত যাতে প্রতিটি বিষয়ের বিজ্ঞতাপূর্ণ ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত আল্লাহর নির্দেশে প্রকাশ করা হয়।’ (সূরা দুখান, আয়াত ৩ ও ৪)। কোনো কোনো তাফসিরকারক এই আয়াতকে উদ্ধৃত করে সেটাকেই শবেবারাত বলে অভিমত দিয়েছেন।
হজরত ইকরামাহসহ কিছু তাফসিরকারকের মতে, পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত ‘লাইলাতুল মোবারাকাহ’ দ্বারা শাবান মাসের মধ্যভাগের রাত (১৪ শাবান)কে বোঝানো হয়েছে। এই রাতে প্রত্যেক ব্যক্তি, জাতি ও দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করে আল্লাহ ফিরিস্তাদের ওপর অর্পণ করেন। ইবনে কাসির তাঁর তাফসির গ্রন্থে এবং ইবনুল আরাবি তাঁর আহকামুল কুরআনে ওই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, মধ্য শাবানের রাতে ভাগ্যের ফায়সালা হয়ে থাকে।
অন্য দিকে হজরত ইবনে আব্বাস (রা:), ইবনুল উমার (রা:), মুজাহিদ(রা:), কাতাদা (রা:), হাসান বসরী (রা:)সহ বেশির ভাগ প্রসিদ্ধ তাফসিরবিদ ‘লাইলাতুল মোবারাকাহ’ বলতে লাইলাতুল কদরকে আখ্যায়িত করেছেন, যা রমজান মাসে আসে। হাদিসে এসেছে, রাসূল সা: শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন। কিন্তু উম্মতকে এ মাসে বেশি রোজা রাখতে নিষেধ করেন যাতে রমজানের জন্য সতেজ থাকে। অবশ্য তিনি মধ্য শাবানের রাতে নামাজ আদায় করা ও দিনে রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। (ইবনে মাজা: কিতাবুল ইকামা)। তিরমিজী শরীফে এসেছে এ রাতে আল্লাহ তায়ালা সর্বনি¤œ আকাশে (দুনিয়ার আকাশে) অবতরণ করেন এবং মানুষকে তাদের পাপ ক্ষমা করানোর জন্য আহ্বান জানান।
শবেবরাত সম্পর্কিত যে কয়েকটি হাদিসের বর্ণনা পাওয়া যায় সেগুলোর বর্ণনাকারী দুর্বল বলে অনেকে মত দিয়েছেন।
শবেবরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বিবৃতি দিয়েছেন। শবেবরাত উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ শুক্রবার মাগরিবের নামাজের পর থেকে দোয়া, মিলাদ ও ওয়াজ মাহফিলের কর্মসূচি রাখা হয়েছে।