ঢাকা: সন্ত্রাস ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান বিরোধের কারণে ২০১৪ সালের পর থেকে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে না। স্থবিরতা চলছে সার্কের কার্যক্রমেও। তবে অনেকটাই বিপরীত চিত্র এই অঞ্চলের আরেক ফোরাম বিমসটেকে। পাকিস্তানবিহীন এই ফোরামকে এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এবারও বিমসটেকে ভারতের অগ্রাধিকারের বিষয়টি প্রতিফলিত হচ্ছে মোদির অভিষেক অনুষ্ঠানে বিমসটেক নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ভারত-পাকিস্তান বিরোধ না মিটলে সার্কের গতি ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ২০১৬ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশসহ একাধিক সদস্য যোগ দিতে রাজি হয়নি। ফলে পাকিস্তানকে ওই সম্মেলন স্থগিত করতে হয়। পাকিস্তান এখনও সেই সম্মেলন আয়োজনের আশায় আছে। তবে পরিস্থিতি বদলায়নি।
ভারতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির বিজেপির ইশতেহারে ‘সার্ক’ শব্দটিরও উল্লেখ ছিল না। ইশতেহারে বিমসটেক প্রসঙ্গে বিজেপি বলেছে, “আমাদের ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতিকে এগিয়ে নিতে ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও আঞ্চলিক সমন্বয় তরান্বিত করতে বিমসটেকের মতো ফোরামকে ব্যাপকভাবে তুলে ধরবো।’’
২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারের চেষ্টার ইঙ্গিত হিসেবে সার্ক নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ভারত। আর এবার দ্বিতীয় মেয়াদে মোদির অভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিমসটেক নেতাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কূটনীতিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০১৪ সালে মোদি ক্ষমতায় আসার পর সার্ককে ঘিরে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু তাতে কালো ছায়া পড়তে সময় লাগেনি। সার্কের আওতায় যে কোনো সিদ্ধান্ত হয় সর্বসম্মতিক্রমে। পাকিস্তানের আপত্তিতে সার্কের বেশ কিছু উদ্যোগ আটকে যাচ্ছিলো। এমন প্রেক্ষাপটে সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল (বিবিআইএন) উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিমসটেককে ভারতের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি বেশ ক’বছর ধরেই স্পষ্ট। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ শীর্ষ সম্মেলনে বিমসটেক নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। গত বছরের আগস্ট মাসে নেপালে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিমসটেককে আরো এগিয়ে নিতে সদস্য দেশগুলোর মধ্যেও উদ্যোগ রয়েছে। সার্কের ক্ষেত্রে এর বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। ভারতে লোকসভা নির্বাচনের পর সার্কের স্থবিরতা কাটবে বলে অনেকে আশা করেছিলেন। কিন্তু ভারতের পুলাওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে যে তিক্ততা তৈরি হয়েছে তা খুব শিগগির দূর হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।