রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বাংলাদেশকে জাপানের পূর্ণ সমর্থন

Slider জাতীয়

বাসস, টোকিও: রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ বাসভূমিতে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রতি জাপান পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মধ্যে বৈঠকের পর আজ বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ সমর্থন ব্যক্ত করা হয়।

জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, দুই নেতা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পালিয়ে আসার ফলে উদ্ভূত দীর্ঘস্থায়ী সংকটের ‘একটি টেকসই ও আশু সমাধান’ নিয়ে আলোচনা করেন।

শেখ হাসিনা এ সংকটের গভীরতা উপলব্ধির জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আবে ও আমি এই মানবিক ও রাজনৈতিক সংকটের একটি টেকসই ও আশু সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাপান অনুধাবন করে, এ সংকটের সমাধান বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ ভূমি মিয়ানমারে দ্রুত, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়ার মধ্যেই নিহিত রয়েছে। আর এ জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।’
শেখ হাসিনা এ সংকট মোকাবিলায় উদার সমর্থন এবং মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত লোকদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রচেষ্টার জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ও আবে জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ককে সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার বোঝাপড়া ও বন্ধুত্বের নিরিখে আমি আস্থাবান যে আমরা তা অর্জন করব।’
শেখ হাসিনা বলেন, দুই নেতা বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ৪০তম ওডিএ ঋণ প্যাকেজ স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই ঋণ প্যাকেজের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী আবেকে ধন্যবাদ জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী আবের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়াতে ও জোরদার করতে বেশ কিছু নতুন ধারণা বিষয়ে দুজন একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দুই দেশ পারস্পরিকভাবে লাভবান হতে পারে এমন সব ক্ষেত্র খুঁজে দেখার ব্যাপারে একমত হয়েছি।’ তিনি বলেন, তাঁদের আলোচনায় দুই দেশের সব সম্ভাবনা পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিষয় প্রাধান্য লাভ করে, কার্যকর সংযোগ প্রতিষ্ঠায় যা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে জাপান সেই টার্গেট অর্জনে আমাদের সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলকে উন্নয়নের গুরুত্ব বিবেচনা করে তাঁরা সেখানে মানসম্মত অবকাঠামো গড়ে তোলার বিভিন্ন ধারণা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, তাঁরা সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ মোকাবিলায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারেরও সিদ্ধান্ত নেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের সন্তানদের নিরাপদ রাখতে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে উদ্ভূত ঝুঁকি প্রশমন এবং বিপারমাণবীকরণ নিশ্চিত করতেও সম্মত হয়েছি। সর্বোপরি আমরা শান্তি ও জ্ঞানের দিগন্ত সম্প্রসারিত করতে পরস্পরের প্রয়াসে সহযোগিতা প্রদানেও সম্মত হয়েছি।’

জাপান বাংলাদেশের জনগণের অন্তরে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে জাপান যে পর্যায়ের অঙ্গীকার প্রদর্শন করে আসছে, তা সত্যিই উল্লেখযোগ্য।’ তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন এবং তাঁর উন্নয়নের চিন্তা ধারা জাপানের উন্নয়নের ইতিহাস দ্বারা বহুলাংশে প্রভাবিত ছিল।

শেখ হাসিনা জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সিংহাসনে আরোহণের আনন্দঘন মুহূর্তে রাজ পরিবারের সদস্য এবং জাপানের জনগণকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *