গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট অংশ নেয়নি। আর এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে উপর্যুপরি দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
আগামী ৫ জানুয়ারি সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উদ্যাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোটকে রাজনৈতিকভাবে মাঠে মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
এ লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর জাতীয় শ্রমিক লীগের এক আলোচনা সভা রোববার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় শেখ রাসেল শিশু কিশোর একাডেমীর এক আলোচনা সভায়ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তিনি। মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক জামালউদ্দিন রাইজিংবিডিকে এ কথা জানান।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের আন্দোলন কর্মসূচি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে জানুয়ারির শুরু থেকে দলের বিভিন্ন সহযোগীসহ ভ্রাতৃপ্রতিম সংঠনকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছে দলের হাইকমান্ড।
এরই অংশ হিসেবে আগামী ৫ জানুয়ারি ঢাকাসহ সারাদেশে বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগ মিছিল-সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি এদিন দুুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলীয় সূত্র আরো জানায়, রাজধানী ঢাকাকে অচলের লক্ষে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের রোডম্যাপ এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ইতোমধ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় মহানগর আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগ সবকিছুর জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকে। তারা যে ভাষায় কথা বলবে আমরা সে ভাষায় জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকবো।
দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ইতিমধ্যে মহানগরীর অর্ন্তগত সব সংসদীয় এলাকার দলীয় সংসদ সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজ নিজ এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বিজয় মিছিল করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপর দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের জনসভায় বিজয় মিছিল নিয়ে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, ‘মহানগর আওয়ামী লীগ রাজপথেই থাকে, রাজপথেই থাকবে। ওই মহিলার (খালেদা জিয়া) কোনো হুমকিতে আমাদের নেতাকর্মীরা ভয় পায় না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা মাঠে থাকবো। কোন রকম নৈরাজ্য, অরাজকতা ও সহিংসতা সৃষ্টির পায়তারা সৃষ্টি করলে তার দাতভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কোন পাকিস্তানি দালাল এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে পারবে না।’
এর আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘অন্য কোনো দলের কর্মসুচি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনার কারণ নেই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা কর্মসূচি পালন করবো। আন্দোলনের হুমকি আওয়ামী লীগকে দিয়ে লাভ নেই। আমরা জানি কিভাবে আন্দোলন করতে হয়, মোকাবেলা করতে হয়।’
গত বছর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলন নৈরাজ্য ও সহিংসতায় রূপ নেয়। সেই আন্দোলনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা ও নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। এছাড়াও বিভিন্ন যানবাহনে আগুন, বোমা হামলায় অনেক মানুষ হতাহত ও নিহতের ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি সাধন হয় রাষ্ট্রীয় সম্পদের।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে রাজধানীতে আবার কোন ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে সরকার সতর্ক রয়েছেন। আমরা নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথে সতর্ক থাকবো।’
এদিকে ক্ষমতাসীন দলের হাইকমান্ডের একাধিক নেতা জানান, ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির যে কোনো চেষ্টা ও পায়তারা প্রতিহত করতে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে সরকার। প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে কর্মসূচি নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঠে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজনীতির মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে দলীয় নানা কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা মহানগরের অর্ন্তগত বিভিন্ন সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম এবং দলীয় সংসদদের মধ্যে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে ধারাবাহিকতায় এরপর দলটি সহযোগী সংগঠন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে যৌথ সভা করেছে। এছাড়া আগামী ২৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে যুবলীগের সঙ্গে এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে কথা চিন্তা করে ১ জানুয়ারি থেকে দিবসভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। এসব কর্মসূচিতে করা হবে বড় ধরনের শোডাউন। এতে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠন ছাড়াও ১৪ দলের কে›ন্দ্রীয় নেতারাও অংশগ্রহণ করবেন। পাশাপাশি গত এক বছরে সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে সকালে জেলা-উপজেলা-পাড়া-মহল্লায় বিজয় মিছিল করবে ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীরা।
এসব কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই ভিন্ন কৌশলে মাঠে নেমেছে ছাত্রলীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তারেক রহমানের কটূক্তির প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করেছে। বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে ছাত্রলীগ নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, তারেক রহমান বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা না চাইলে তার মা খালেদা জিয়া আগামীতে যেখানেই সমাবেশ করবেন, সেখানেই প্রতিহত করা হবে।
তারা এরমধ্যে ২৭ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাজীপুরের জনসভাস্থলে পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের জনসভা প্রতিহতে ঘোষণায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতির ময়দান।
এমনকি যুবলীগও ৫ জানুয়ারি পৃথকভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আলাদাভাবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণকে কেন্দ্র থেকে ইতিমধ্যেই মাঠে সরব থাকার দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন।