ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ থেকে সরে গিয়ে ছাত্রলীগ ‘জঙ্গি কার্যক্রমের’ দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক। তাঁর অভিযোগ, ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাঁকে হত্যা করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা করানো হচ্ছে।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক এসব কথা বলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ইফতার অনুষ্ঠানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগের বাধা ও বগুড়ায় মারধরের ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
গত রোববার বগুড়ায় স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের দ্বারা তিনিসহ তাঁর সংগঠনের কয়েকজন নেতা-কর্মী মারধরের শিকার হওয়ার ঘটনার বিচার করতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছেন নুরুল।
ভিপি নুরুল হক বলেন, ‘ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া একটি ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। কিন্তু রমজান মাসে ইফতারের প্রোগ্রামে হামলা করে ছাত্রলীগ প্রমাণ করেছে, তারা একটি সাম্প্রদায়িক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে। তাদের কার্যক্রম সাম্প্রতিক কালের জঙ্গিদের কার্যক্রমের সদৃশ মনে হচ্ছে। কিছুদিন আগে পয়লা বৈশাখের কনসার্টেও তারা অগ্নিসংযোগ করেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে যে আইনের শাসনের কথা বলে থাকেন, আমরা তার প্রয়োগ দেখতে চাই। হামলায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিচারের মাধ্যমে তার প্রমাণ দেওয়া হোক।’
তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার সময় আমি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তাঁরা বলেছিলেন, ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু পরদিন একই ঘটনা ঘটেছে। এটি কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়, সম্পূর্ণ পরিকল্পিত ছিল। ডাকসুর ভিপি হওয়ার পর থেকে আমাকে হত্যা করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই হামলাগুলো করানো হচ্ছে। বগুড়া থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আমি যখন ফিরছিলাম, হঠাৎ অ্যাম্বুলেন্সটি নষ্ট হয়ে যায়। পরে আমি একটি মাইক্রোবাসে করে ফিরছিলাম। সেই মাইক্রোবাসকে একটি ট্রাক পাশ থেকে ধাক্কা দিয়েছিল, আমাকে ট্রাকচাপা দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা হয়েছিল। সেই ট্রাকটি ছিল সিরাজগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের।’
নুরুল হক বলেন, ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সরকার বা কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধী নয়, কোনো রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনও নয়। এই সংগঠন সমাজ-রাষ্ট্রের অন্যায়-অনিয়ম-বৈষম্যের বিরুদ্ধে কিংবা মানুষের অধিকার আদায়ে কথা বলে যাবে। তারপরও কেন বারবার আমাদের ওপর হামলা করা হচ্ছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার জবাব চাইছি এবং হামলায় জড়িতদের অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এ দেশের মানুষের যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে।’
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তাঁকে পদ-পদবি-সুবিধা ‘অফার’ করেছিলেন দাবি করে নুরুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় কমিটির ১ নম্বর সহসভাপতি বা ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ নিতে চাইলে তারা আমাকে কমিটিতে রাখবে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক (গোলাম রাব্বানী) সেটি আমাকে বলেছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগের রাজনীতি করলে তাঁরা আমার সকল সুযোগ-সুবিধা দেখবেন, আমি যেন অন্য কারও রাজনীতি না করি বা অন্যদিকে না যাই। তাঁদের সঙ্গে যাইনি বা তাঁদের কথার সঙ্গে একমত হতে পারিনি বিধায় তাঁরা পরিকল্পিতভাবে আমার ওপর হামলা চালাচ্ছেন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বগুড়ায় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীদের বাধা ও হামলার ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে নুরুল হক বলেন, ‘২৫ মে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শাখার ইফতার ছিল। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সেই প্রোগ্রাম প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল এবং সেখানে পুলিশি নিরাপত্তায় কোনোমতে প্রোগ্রাম করেছিলাম। কারণ, সেখানে আমরা যে ভেন্যু ঠিক করেছিলাম, তালা মেরে তার চাবি নিয়ে গিয়েছিল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। আমাদের প্রতিহত করার জন্য তারা মিছিলও করেছিল। পরের দিন বগুড়ায় আমাদের ইফতার ছিল। সেখানে যাওয়ার আগে স্থানীয় থানার পুলিশকে ফোন করে আমি নিরাপত্তা চেয়েছিলাম। তাঁরা বলেছিলেন, এই মুহূর্তে তাঁরা সহযোগিতা করতে পারবেন না। যখন আমরা উডবার্ন সরকারি গ্রন্থাগারের সামনে গিয়ে লাইব্রেরিয়ানের সঙ্গে কথা বলছিলাম, ঠিক তখন বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাইমুর রাজ্জাক তিতাস, সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রউফ, জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাকভিরুল ইসলাম খান ও প্রচার সম্পাদক মুকুল ইসলাম এসে আমাদের ওপর জঙ্গিদের মতো হামলা করে। তারা আমার সঙ্গীদের রড দিয়ে পেটায় আর আমার বাঁ পায়ে ইট দিয়ে আঘাত করে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক রাতুল সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।