ফসলের মাঠ সেজেছে হলুদ বরণে

কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

Picture-3-1419229057যেদিকে চোখ যায় শুধু হলদে রং। যেন হলুদ বরণে সেজেছে ফসলের মাঠ। দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠজুড়ে এখন হলুদ রঙের ছড়াছড়ি। সরিষা ফুলের হলুদ বরণ সৌন্দর্য প্রকৃতিতে দিয়েছে এক অপরূপ রূপ।

হলুদ রঙের আভায় মন ভরে ওঠার মুহূর্তটি প্রকৃতিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। আর এই দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভুলছেন না প্রকৃতিপ্রেমীরা। সরিষা খেতের হলদে ফুলের সমারোহে আনন্দ-আড্ডায় মেতে উঠছেন ভ্রমণপিপাসুরা। সেই সঙ্গে সরিষা ফুলের মিষ্টি সুবাস গ্রামীণ জনপদকে আরো মধুময় করে তুলেছে। এ সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ মৌসুমে নড়াইলে ৫ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ২ হাজার ২০ হেক্টর, লোহাগড়ায় ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর ও কালিয়া উপজেলায় ৭৮৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষাবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে (২০১৩-১৪) আবাদ হয়েছিল ৫ হাজার ৫১০ হেক্টরে। চলতি মৌসুমে সরিষার আবাদ বেড়েছে।

ফুলে ফুলে সরিষাখেত ভরে ওঠায় খুশি কৃষক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো দানার সরিষা পাবেন বলে আশা করছেন। নড়াইল সদরের মুশুড়ি গ্রামের শচীন কুমার বলেন, ‘আমি ৫০ শতক জমিতে সরিষার চাষ করেছি। গত বছর থেকে এ বছর ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’

লোহাগড়ার নলদী এলাকার মোসলেম উদ্দিন জানান, এ বছর সরিষা ভালো হয়েছে। ফুলে ফুলে মাঠ ভরে গেছে, কিছুদিন পরে দানা (সরিষা) আসবে। গোবরার ছবি রানী জানান, ১৫ শতক জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। ভালো ফলন দেখা যাচ্ছে। মাঘ মাস সরিষা তোলার সময় বলে জানান তিনি।

নড়াইলের আমাদা আদর্শ কলেজের ইংরেজি প্রভাষক কলোড়ার দুর্গা সরকার বলেন, ‘সরিষাখেত প্রকৃতিতে যেন হলুদ আবরণ ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন বিকেলে এখানে ঘুরতে আসি। এখানে এলে মনটা আনন্দে ভরে উঠে।’

প্রথম শ্রেণির ছাত্র আশীষ জানায়,  ‘আমাদের (কলোড়া) মাঠে সরিষার অনেক ফুল। সরিষার ফুলে খুব ঘ্রাণ।’ সদরের বিড়গ্রামের অরুণ কুমার সরকার বলেন, ‘সুজলা-সুফলা বাংলাদেশের অপরূপ রূপ শুধু দেশের মানুষকেই নয়, বিশ্বের মানুষকেও আকৃষ্ট করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় কৃষকসহ খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের প্রাপ্তি এই সরিষাখেত, এই কৃষি ফসল। আর তাই বাংলার প্রকৃতির টানে প্রকৃতিপ্রেমীরা সরিষা খেতে ঘুরতে আসছেন।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, নড়াইলের উপপরিচালক শেখ আমিনুল হক বলেন, ‘নড়াইলের মাটি সরিষা চাষের উপযোগী। এখানকার কৃষকেরা বারি সরিষা-৯, বারি সরিষা-১১, বারি সরিষা-১৪ ও বারি সরিষা-১৫ চাষাবাদ করেছেন। সরিষা লাভজনক ফসল হওয়ায় কৃষকেরা আগের চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন।’ এ ছাড়া সরিষার পাতা ও ফুল মাটিতে পচে জমির উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *