বাসস: জনগণের কল্যাণে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু ভোটে জয়লাভ করলেই চলবে না, জনগণের হৃদয়ও জয় করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘জনস্বার্থে যদি আপনি কাজ করেন, মানুষের হৃদয় যদি আপনি জয় করতে পারেন, তাহলে দেখবেন জনগণই আপনার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখেছে এবং আপনাকে তাঁদের সেবা করার সুযোগটা বারবার দেবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ আপনাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন, আপনারা তাঁদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন। তাঁদের প্রতি আপনাদের দায়িত্ব রয়েছে। রাজনীতিটা যদি ব্যক্তিস্বার্থে হয়, তাহলে সে রাজনীতি কখনো জনগণের কল্যাণ করতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সোমবার সকালে তাঁর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের ওপর বিরাট দায়িত্ব। তাই মনে রাখতে হবে, জনপ্রতিনিধি হওয়া মানেই জনগণের জন্য, শুধু যারা আপনাকে ভোট দিয়েছেন তারা নয়, আপনি এলাকার সব মানুষেরই প্রতিনিধি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘হ্যাঁ আমি আওয়ামী লীগের সভাপতি কিন্তু যখন প্রধানমন্ত্রী তখন সমগ্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দল-মতনির্বিশেষে সকলের কল্যাণ করাই আমার দায়িত্ব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারাও সেভাবে নিজেকে মনে করবেন এবং স্ব স্ব দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে এবং বিশ্বের দরবারে যে মর্যাদার আসন করে নিয়েছে, সেটা অব্যাহত থাকবে। আপনারা সেভাবেই কাজ করবেন এবং আমার তরফ থেকে সব রকম সহযোগিতা আপনারা পাবেন। ময়মনসিংহ নতুন সিটি করপোরেশন, এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস আছে সেটা আপনারা পারবেন।’
প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত মেয়র একরামুল হক টিটুকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
পরে এলজিআরডিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম একই স্থানে সংরক্ষিত আসনসহ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৪৪ জন কাউন্সিলরকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এস এম গোলাম ফারুক শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী একরামুল হক টিটু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেয়র নির্বাচিত হন। এর আগে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আহমেদ তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন।
৫ মে অনুষ্ঠিত হওয়া ময়মনসিংহের সিটি নির্বাচনের ৩৩টি ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯৭ হাজার।
৩৩টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের জন্য প্রায় ২৪২ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ছাড়া ১১টি সংরক্ষিত আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ৭০ জন।
দেশের ১২তম সিটি করপোরেশন ময়মনসিংহের নির্বাচনে এবার ভোট প্রদানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ভাষণে তাঁর সরকারের আমলে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে অতীতের তুলনায় কয়েকগুণ বাজেট বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আগামী ১৩ জুন জাতীয় সংসদে এ বছরের বাজেট পেশ করা হবে এবং এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হবে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা।
শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়ন বাজেট যা অতীতে ছিল মাত্র ১৯ হাজার কোটি টাকা, সেটার আকার দাঁড়াবে এবার প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ উন্নয়নের ছোঁয়াটা শুধু শহরভিত্তিক নয়, একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে গ্রামভিত্তিক যেন হয়। আর এবারও আমরা ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন করেছি।
দেশের বাজেটের ৯০ শতাংশ সরকার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বাস্তবায়ন করে থাকে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় স্বাধীন জাতি হিসেবে কারও কাছে হাত পেতে নয়, বরং আত্মমর্যাদাবোধ নিয়ে চলার ওপর গুরুত্বারোপ করে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।
‘বাংলাদেশকে আমরা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদমুক্ত করতে সক্ষম হয়েছি’ উল্লেখ করে তিনি নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা এই বিষয়টা অবশ্যই ভালোভাবে দেখবেন।’ তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদক, যা একটা পরিবারকে ধ্বংস করে, একটি দেশকে ধ্বংস করে, সমাজকে ধ্বংস করে। কাজেই, আপনাদের কারও ছেলেমেয়েই কখনো যেন এদিকে দৃষ্টি না দেয়, এর সঙ্গে জড়িত না হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, গত এক দশকে তাঁর সরকারের শাসনে বাংলাদেশ আজকে উন্নত হয়েছে। আজকে জাতির পিতার হাতে গড়া বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের দেশ, মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ‘যে মর্যাদা ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরে উঠেছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১ থেকে ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশা আল্লাহ সামনে একে আরও কমিয়ে আনব এবং বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে গড়ে তুলব, সেটাই আমাদের স্বপ্ন।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ২৬ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত মুজিববর্ষ পালন এবং নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় সরকার গৃহীত শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে তাঁর সরকারের উদ্যোগও তুলে ধরেন।