বগুড়া: ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে বগুড়ায় গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক। নুরের ওপর বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ভিপি নুরসহ অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন।
গতকাল শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ইফতার অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নূর।
আজ রোববার বিকেলে বগুড়ার উডবার্ণ পাবলিক গ্রন্থাগারের মধ্যে নূরকে আহত করার এই ঘটনা ঘটেছে। আহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন ভিপি নূরুল হক, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাসুল ও বেসরকারি যমুনা টেলিভিশনের ভিডিওগ্রাফার শাহনেওয়াজ শাওন। ভিপি নূরকে প্রথমে বগুড়ার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিল যোগ দেওয়ার জন্য ভিপি নুরুলসহ ১৮ জন ঢাকা থেকে গতকাল শনিবার বিকেলে বগুড়ায় আসেন। উডবার্ণ সরকারি গ্রন্থাগার মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। তবে আয়োজকেরা জানান, দুপুর দুইটার দিকে শহরের স্টেডিয়াম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোস্তাফিজ হাসান নিরাপত্তার ঝুঁকির কথা বলে তাদের জানায় এখানে কোনো অনুষ্ঠান করতে নিষেধ করেন। পরিদর্শক মোস্তাফিজ হাসান নিষেধ করার পর পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সদস্য এসে তাঁদের অনুষ্ঠান করতে নিষেধ করেন। এরপর তাঁরা অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য ভেন্যু নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ভিপি নুর ১৮ জনের একটি দল নিয়ে উডবার্ণ সরকারি গ্রন্থাগার চত্বরে আসেন। তবে পুলিশের লিখিত অনুমতি না থাকায় সেখানে অনুষ্ঠানের বাধা দেন সহকারী লাইব্রেরিয়ান রাজু আহম্মেদ। তাঁর সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিলেন নুর। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বগুড়া ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে একটি দল গ্রন্থাগার চত্বরে প্রবেশ করেন। এরপর কোনো কথা বলার আগেই বগুড়া আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ ভিপি নুরকে ঘুষি মারেন। এরপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নুরের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। মারপিট চলার সময় ভিডিও ধারণ বন্ধের হুমকি দিয়ে যমুনা টেলিভিশনের ফটোগ্রাফারকেও মারধর করেন ছাত্রলীগের সদস্যরা। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা চলেও যাওয়ার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ভিপি নুরকে গ্রন্থাগারের প্রধান ফটকে ফেলে পেটান। এতে নূর ‘অজ্ঞান’ হয়ে গেলে ভিপি নুরকে রিকশায় তুলে দেন ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রউফ। এরপর দলীয় স্লোগান দিতে দিতে ঘটনাস্থল থেকে খানিকটা দূরে টিটো মিলনায়তনে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইফতার মাহফিলে যোগ দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইফতার উপলক্ষে বিকেলে থেকে টিটো মিলনায়তনে পুলিশের একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। হামলার পর পুলিশের সদস্যরা সেখানে গিয়ে উপস্থিত ছাত্রলীগের সদস্যদের সরিয়ে নেন।
পুলিশের এ দলে উপস্থিত ছিলেন স্টেডিয়াম পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মোস্তাফিজ হাসান। তিনি বলেন, এখানে অনুষ্ঠানের বিষয়টি আগেই নিষেধ করা হয়েছে। তারপরও ভিপি নুরও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্যরা সেখানে ছিলেন। তবে ঘটনার খবর শুনে পুলিশ গ্রন্থাগার চত্বরে এসেছে। এখন আর কোনো ঝামেলা নেই।
গ্রন্থাগার চত্বরে অনুষ্ঠানের অনুমতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বগুড়া শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল হাসান বলেন, হঠাৎ গতকাল শনিবার ইফতার মাহফিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ সদর থানাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এরপর পুলিশ আরও অনুমতি দেয়নি। এই কারণে অন্য এলাকায় ইফতারের আয়োজনের কথা চলছিল। এর মধ্যেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসে ভিপি নুরকে মারধর করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাইমুর রাজ্জাক বলেন, গ্রন্থাগারের কাছেই আজকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ইফতার মাহফিলের অনুষ্ঠান হচ্ছিল। কিন্তু এর মধ্য গ্রন্থাগার চত্বর থেকে চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এই কারণে ছাত্রলীগের সদস্যরা সেখানে গিয়ে দেখেন, গ্রন্থাগার চত্বরে ভিপি নুর এসেছেন। এই সময়ে ভিপি নুরের সঙ্গে হালকা ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। আর সাংবাদিকের ওপর হামলার বিষয়টি দুঃখজনক।