ঢাকা: আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ, ২৫ মে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মদিন। ১৮৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রামে এই মহান কবির জন্ম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। অগ্নিবীণা হাতে যার প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনেও।
এক পাড়ে বর্ধমান, আরেক পাড়ে বীরভূম। মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে অজয় নদ। এই অজয় নদের তীরে তাল-তমাল আর মহুয়া বনে ঘেরা চুরুলিয়া গ্রাম। এই চুরুলিয়া গ্রামেই জন্মগ্রহন করেন কাজী নজরুল ইসলাম। পরপর চার সন্তানের মৃত্যুর পর নজরুলের জন্ম হয়েছিলো বলে তার নাম রাখা হয়েছিলো দুখু মিয়া। তবে এই নামটাই তার পরবর্তী জীবনে সত্য হয়ে ধরা দিয়েছিলো। আট বছর বয়সে পিতৃহারা নজরুল শৈশবকে দেখেছিলেন অবর্ণনীয় লোনাজলে। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারনে তার শিক্ষা জীবন বাধাগ্রস্ত হয় এবং মাত্র দশ বছর বয়সে তাকে নেমে যেতে হয় জীবিকা অর্জনে।
জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে যার দারিদ্রের সাথে, সেই নজরুলের লেখনীতে একদিকে ছিলো বিদ্রোহ, অন্যদিকে মানবতাবাদী। তার গান জাতিকে জাগরণের পথে প্রেরণা যুগিয়েছে। কবিতা, গান ও গদ্য উপমহাদেশের মানুষকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। একজন সাংবাদিক হিসেবেও নজরুলের সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করেছে। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা রচনার জন্য কবি রাজদ্রোহের অপরাধে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে সসম্মানে ভারত থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবির সম্মান দেন। মধ্য বয়সে কবি পিকস রোগে আক্রান্ত হন। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে নিশ্চুপ হয়ে যান কবি জীবনের বাকিটা সময়। আটটাত্তর বছর বেঁচেছিলেন নজরুল। ৩৪ বছরই ছিলেন বাঁকহারা, বাকি চুয়াল্লিশ বছরের সচল জীবনে কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টি বিস্ময়কর।
দিপন দেওয়ান, বাংলাভিশন, ঢাকা।