ঢাকা: প্রতি বছর কমলাপুর স্টেশনে ঈদযাত্রার টিকিটের জন্য ভিড় করেন লাখো মানুষ। এবার দুর্ভোগ কমাতে অর্ধেক টিকিট বিক্রি হবে ‘রেল সেবা’ অ্যাপের মাধ্যমে। তবে যাত্রীরা অভিযোগ করে বলছেন, রেলসেবা অ্যাপস ব্যবহার করে অগ্রিম একটি টিকিটও কেনা যাচ্ছে না। বুধবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিযোগ পাওয়া যায়।
ই-টিকেট সংগ্রহ করতে না পেরে সকালে অনেকেই ছুটছেন স্টেশনের দিকে। কমলাপুর স্টেশনে কাউন্টারে আগের রাত থেকে অপেক্ষমাণ টিকেটপ্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন তারা।
বেলা সাড়ে ১০টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে টিকেট বিক্রির কার্যক্রম পরিদর্শনের পর ই-টিকেটিংয়ের অব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা স্বীকার করে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, সেবাদাতা সংস্থা সিএনএসবিডিকে পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ই-টিকেটিং সেবা ঠিক না হলে অবিক্রিত টিকিটগুলো ২৭ মে কাউন্টারে দেওয়া হবে। সিএনএসবিডি কাঙ্ক্ষিত যাত্রী সেবা দিতে ব্যর্থ হলে সেপ্টেম্বরে তাদের সঙ্গে যে চুক্তি হওয়ার কথা তা আর কথা হবে না।
অ্যাপসের মাধ্যমে রেলের কাঙ্ক্ষিত টিকিটসেবা দিতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করে রেলপথমন্ত্রী বলেন, অ্যাপসে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএসের সঙ্গে ২০০৭ সাল থেকে চুক্তি। এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে আর বাড়ানো হবে না। সিএনএসের ব্যর্থতার দায় আমরা এড়াতে পারি না। তাই অবশ্যই সিএনএসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিশেষ দিবসগুলোতে পরিবহন সক্ষমতার চেয়েও বেশি যাত্রী থাকে। তাই বিশেষ দিবস নজর দিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ঈদে যাতে যাত্রীদের কোনো বিড়ম্বনা না হয়, আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
ঈদের স্পেশাল কাউন্টার ৯টি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ৬টি পুরুষ ও ৩টি নারী কাউন্টার। যেহেতু অ্যাপসে সমস্যা হচ্ছে, তাই আসন থাকা সাপেক্ষে অবশিষ্ট টিকিট ২৭ মে বিক্রি করা হবে।
২১ মে অনলাইনে ১৪ হাজার ৭৫৪টি, অ্যাপসের মাধ্যমে ১ হাজার ৫৫৭ ও মোবাইলে ৫ হাজার ২৮০টি টিকিট বিক্রির পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যদি কালোবাজারি থাকে, আপনারা হাতেনাতে ধরে দেন।
এদিকে অনলাইনে টিকিট পেতে ভোগান্তির অভিযোগ পেয়ে কমলাপুরে অনলাইন টিকিটিং সিস্টেমের সার্ভার রুমে অভিযান চালিয়েছে দুদক টিম। বুধবার সকাল ১০টার দিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তিন সদস্যের একটি টিম কমলাপুরে যায়। এ টিমের লিডার হিসেবে রয়েছেন দুদকের সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন। তারা অনলাইন টিকিটিং সিস্টেমের সার্ভারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ বিষয়ে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা টিকিট সংগ্রকারীদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে এসেছি। এখানে অনলাইন টিকিটিং সিস্টেমের সার্ভারের কর্মকর্তারা বলেছেন, সার্ভার ডাউন হয়ে যাচ্ছে। তাই টিকিট পেতে একটু সমস্যা হচ্ছে। সার্ভার ডেভেলেপমেন্টের কাজ চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তাদের বলেছি, যেন কোনো কালোবাজারি না হয়, সে দিকে সতর্ক থাকবে। কালোবাজি হলে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি জানান, আমরা এখানে শুধু অনলাইন টিকিটিং সিস্টেম দেখছি না, সার্বিক দিক দেখছি। সার্বিক দিক বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। পরে বলা যাবে।
কমলাপুরসহ ঢাকার ৫টি জায়গা থেকে এই টিকিট দেওয়া হচ্ছে। বুধবার দেওয়া হচ্ছে আগামী ৩১ মের টিকিট। ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হবে ‘রেলসেবা’ নামের অ্যাপের মাধ্যমে। বাকি টিকিট বিক্রি হবে কাউন্টার থেকে। প্রতিদিন ঢাকায় প্রায় ২৭ হাজার টিকিট দেওয়া হবে।
পশ্চিমাঞ্চল অর্থাৎ রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে কমলাপুর থেকে। বিমানবন্দর স্টেশনে পাওয়া যাবে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী ট্রেনের টিকিট। তেজগাঁও থেকে বিক্রি করা হবে ময়মনসিংহ ও জামালপুর ট্রেনের টিকিট। বনানী থেকে দেওয়া হবে নেত্রকোনা ও মোহনগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট। সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকিট দেওয়া হবে ফুলবাড়িয়ার পুরনো রেল ভবন থেকে।
বৃহস্পতিবার বিক্রি করা হবে ১ জুনের টিকিট। ২৪ মে দেওয়া হবে ২ জুনের টিকিট। ২৫ মে বিক্রি হবে ৩ জুনের টিকিট। ২৬ মে দেওয়া হবে ৪ জুনের টিকিট।
গত বছরের ঈদুল ফিতরের সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ৩১টি আন্তঃনগর ট্রেনে আসন সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ৩৪৫টি। এবার তা বেড়ে হয়েছে ২৭ হাজার। ঈদের আগের পাঁচ দিন ছয় জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে। এতে আসন সংখ্যা আরও বাড়বে।
বাংলাদেশে তৈরি এ অ্যাপের মাধ্যমে ঘণ্টায় ১৫ হাজার টিকিট বিক্রি সম্ভব। গত ২৮ এপ্রিল অ্যাপটি চালুর পর ১৭ মে পর্যন্ত ডাউনলোড হয়েছে এক লাখের বেশি বার। অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৩১টি টিকিট বিক্রি হয়েছে। ২২ হাজার ৩২টি টিকিট বিক্রি হয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে।