ডেস্ক: ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মধ্যে সংঘাত বা দাঙ্গা বেধে যাওয়ার সমুহ আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। তারা বলছে, দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ও মুসলিম সংখ্যালঘুদের মধ্যে ক্রমশ বাড়ছে উত্তেজনা। এর পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ এক রক্তাক্ত পরিণতি। যেমনটা দেখা গিয়েছিল প্রায় এক দশক আগে এলটিটিই’কে নির্মূল করার সময়। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এতে বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, শ্রীলঙ্কায় যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে তাতে খ্রিস্টানদেরকে ইসলামপন্থি উগ্রবাদীরা টার্গেট করেছে এ জন্য যে, তাতে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি সহজে আকৃষ্ট হবে। কিন্তু তারা টার্গেট করতে পারতো দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের। সম্প্রতি সেখানে মসজিদগুলোতে ঘেরাও দিয়ে তল্লাশি করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্রশস্ত্র। এতে উত্তেজনা শুধু বাড়বেই। এ অবস্থায় আরো সতর্কতা অবলম্বনের জন্য শ্রীলঙ্কাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে ভারত।
রয়টার্স লিখেছে, আগেই বলা হয়েছিল সাংগ্রি লা হোটেলে হামলার সময় নিহত হয়েছে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী জাহরান হাশিম। এখন ডিএনএ পরীক্ষায়ও প্রমাণ হয়েছে ওই হামলায় নিহত হয়েছে সে। হামলার কয়েকদিন আগে দেশটিকে গোয়েন্দা তথ্য জানিয়েছিল ভারত। তা সত্ত্বেও ভারতের ভূমিকার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার সরকার আমল দেয় নি বললেই চলে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মহেশ সেনানায়েকের মতো কিছু সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, হামলাকারীরা ভারতের ব্যাঙ্গালোর, জম্মু ও কাশ্মির, কেরালা সফর করেছিল। প্রশিক্ষণের জন্য তারা এসব স্থান সফর করেছিল। ভারতের সিনিয়র সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তারা শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করছিলেন। ভারতেও তারা আসন্ন দিনগুলোতে একটি ইসলামপন্থি সেন্টার গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল। শ্রীলঙ্কায় গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জাহরান হাশিমের সহযোগি মোহাম্মদ আলিয়ারকে। দুই দেশে তাদের নেটওয়ার্কের মধ্যে সহযোগিতা করে যাচ্ছিল সে। সন্ত্রাসী গ্রুপ ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াত শ্রীলঙ্কায় ওই হামলা চালিয়েছিল। এই গ্রুপের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার কারণে সোমবার শ্রীলঙ্কা পার্লামেন্টের একজন স্টাফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহৃত জিনিসপত্র সহজপ্রাপ্তির বিষয়ে শ্রীলঙ্কাকে তথ্য শেয়ার করেছিল ভারত। ভারতের কর্মকর্তারা বলেন, তাদের সমুদ্রপথে কড়াকড়ি করা উচিত ছিল। এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বিশেষজ্ঞ শেয়ার করার আশা করছিল ভারত। তবে শ্রীলঙ্কা হামলায় পাকিস্তান বা ওই দেশটির কোনো জিহাদি গ্রুপের নাম উঠে আসে নি, যদিও শ্রীলঙ্কায় পাকিস্তানের হাই কমিশনের সন্দেহজনক কিছু ‘কন্ট্রাক্টের’ বিষয়ে ভারত অবহিত ছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা ভারতের সতর্কতাকে অবজ্ঞা করেছে। কারণ, তারা ভেবেছিল ভারত তাদের মধ্যে কর্তৃত্ব দেখানোর চেষ্টা করছে। ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক সূত্রগুলো বলছে, পাকিস্তানের যোগসূত্র সহসাই বেরিয়ে আসবে। শ্রীলঙ্কায় মুসলিমদের, বিশেষ করে ভারত বিরোধীদের, উগ্রবাদী করে তোলায় পাকিস্তানের সন্দেহজনক ভূমিকা আছে বলে সন্দেহ করা হয়। ২০১৩ সালে প্রথম একজনকে এমন সন্দেহে গ্রেপ্তার করে এনআইএ। তখন দেখা যায়, পাকিস্তান হাই কমিশনের একজন কর্মকর্তার সন্ত্রাসের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।
কয়েকদিন আগে লেবাননের একটি খবরের কাগজে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি কূটনৈতিক ক্যাবল ফাঁস হয়েছে। তাতে বলা হয়, ইস্টার সানডে হামলার বিষয়ে অন্যদের চেয়ে বেশি জানতো রিয়াদ। এতে জল্পনা কল্পনার ঝড় ওঠে। ওই ক্যাবল এখনও প্রত্যাখ্যান করে নি সৌদি আরব। এটি শ্রীলঙ্কায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল নাসের বিন হোসেন আল হারেথিকে উদ্দেশ্য করে পাঠিয়েছিল সরকার। তাতে স্বাক্ষর ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইব্রাহিম বিন আবদুল আজিজ আল আসাফের। এতে সৌদি আরবের নাগরিকদেরকে ইস্টার সানডেতে কোনো চার্চের কাছাকাছি না যেতে সতর্ক করতে বলা হয় রাষ্ট্রদূতকে। একই সঙ্গে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ডকুমেন্ট ডিলিট করে দিতে বলা হয়।