ঢাকা: ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঢাকার গুলিস্তান বা মহাখালী থেকে টঙ্গী হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার যেতেই লাগছে চার ঘণ্টা। এরপরের ৮৭ কিলোমিটার পার হওয়া যাচ্ছে দুই ঘণ্টায়।
গত শনিবার ছুটির দিনে মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে আলম এশিয়া পরিবহনের যাত্রী নিজাম উদ্দিন সকাল ৯টায় রওনা দিয়ে ময়মনসিংহ পৌঁছান ছয় ঘণ্টায়। তিনি বলেন, গাজীপুর চৌরাস্তা পার হতেই চার ঘণ্টা লেগেছে। তবে নতুন চার লেন পার হওয়া গেছে দুই ঘণ্টায়। ভুক্তভোগীরা জানায়, ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ দশমিক এক কিলোমিটারে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলছে। টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা অংশে বিদ্যমান সড়কে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা নেই। এ ছাড়া গাড়ি পার্কিং করে রাখা হচ্ছে টঙ্গী, চেরাগ আলীসহ বিভিন্ন স্থানে।
গত শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিমানবন্দর থেকে হাউস বিল্ডিং পর্যন্ত ২ দশমিক ৬ কিলোমিটার অংশে তিনটি উড়াল সেতুর খুঁটি বসানো হচ্ছে। টঙ্গী ব্রিজ এলাকায় চলছে পাইলিং। কলেজ রোড থেকে শিববাড়ী পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারে খুঁটি বসানোর কাজ চলছে। এত সব সত্ত্বেও প্রকল্প পরিচালক সানাউল হক বলেন, ‘আমরা যানজট সহনশীল রাখতে চেষ্টা করছি।’
এবার ঈদ যাত্রা শুরু হচ্ছে ৩০ মে থেকে। ৫ জুন ঈদুল ফিতর হবে ধরে নিয়ে গত শুক্রবার থেকে বাসে বাড়ি যাওয়ার আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। ৩ জুন বেশির ভাগ তৈরি পোশাক কারখানা ছুটি হবে। ফলে টঙ্গী, গাজীপুর হয়ে ঈদ যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়বে। শুধু এই মহাসড়ক নয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-আশুলিয়া-নবীনগর মহাসড়কেও যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। কারণ ঈদ ঘনিয়ে এলেও সমন্বিত সড়কব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হয়নি। অতীতে যেভাবে বিভিন্ন সংস্থা ঈদ যাত্রা সামনে রেখে সভায় বসত, এবার বসেনি। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বলছে, যানজটমুক্ত ঈদ যাত্রার জন্য ধাপে ধাপে তৈরি পোশাক কারখানায় ছুটি দিতে হবে।
২৬ শতাংশ সড়ক নাজুক : সওজ অধিদপ্তরের মহাসড়ক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ-এইচডিএমের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, অধিদপ্তরের ২৬.৩২ শতাংশ বা পাঁচ হাজার কিলোমিটার সড়ক ভাঙাচোরা। ‘ইন্টারন্যাশনাল রাফনেস ইনডেক্স’ বা আইআরআই অনুযায়ী, ১৮ হাজার কিলোমিটার সড়ক জরিপ করে সড়কের অবস্থার বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে এইচডিএম। অধিদপ্তরের দুর্বল সড়ক দুই হাজার ৫২৮ কিলোমিটার, খারাপ সড়ক এক হাজার ২৮২ কিলোমিটার ও খুব খারাপ সড়ক এক হাজার ৮৪৩ কিলোমিটার।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বাধা টোলপ্লাজা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের বড় কারণ সংকুচিত সেতু ও টোল আদায়ে ধীরগতি। গত ১৬ মার্চ দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী শনিবার নতুন নির্মিত দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতী সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
গত শনিবার রাজধানীর শাহজাহানপুর থেকে নিজের গাড়িতে কুমিল্লার বরুড়ায় যেতে রওনা দেন দীপক কুমার ভৌমিক। বিকেল সোয়া ৪টায় রওনা দিয়ে পৌনে দুই ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার অতিক্রম করে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পৌঁছান। দীপক মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঈদে এবার যানজট হবে না যদি মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোল দ্রুত আদায় করা হয়।’
জানা গেছে, গত ৩০ এপ্রিল মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোলপ্লাজার একটি লেনে টোলপ্লাজায় ‘উইন্ডশিল্ড বেইজড্ ফার্স্ট ট্র্যাক ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন’ বা ইটিসি উদ্বোধন করা হয়। এ পদ্ধতিতে গাড়ির সামনের আয়নার উপরিভাগে সংযুক্ত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন বা আরএফআইডি ট্যাগের সঙ্গে টোল গেটের এন্টেনার সংকেতের মাধ্যমে টোল আদায় হয়। যানবাহন টোলপ্লাজা পার হওয়ার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত টোল কাটা হবে ব্যাংক হিসাব থেকে। টোল আদায়ের পরপরই খুদে বার্তার মাধ্যমে গ্রাহককে জানিয়ে দেওয়া হবে টোল আদায় এবং ব্যাংক হিসাব থেকে কর্তনের সর্বশেষ তথ্য। এ প্রক্রিয়াটি শেষ হতে সর্বোচ্চ ১০ সেকেন্ড সময়ের প্রয়োজন হয়। ইটিসি সেবা গ্রহণের জন্য যানবাহনকে এর আগে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।
পরিবহন মালিক ও চালকরা জানান, এখন পর্যন্ত এনা পরিবহনসহ কয়েকটি কম্পানির বাস এ পদ্ধতির আওতায় এসেছে। ফলে ঈদের আগে সব গাড়ি থেকে দ্রুত টোল আদায় সম্ভব হবে না। ফলে এ মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা আছে।
সওজ অধিদপ্তরের অধীন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ৭০ কিলোমিটারে চার লেন গত ৩১ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুরো কাজ শেষ হয়নি। সার্ভিস লেন, ২৯টি সেতু, চারটি উড়াল সেতু ও ১৪টি আন্ডারপাস নতুন যোগ করায় পুরো কাজ শেষ করতে আরো দেড় বছর লাগবে। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এ পথের নিয়মিত বাসচালক গফুর মিয়া বলেন, ‘এখন এ পথে যানজট হচ্ছে না। মূল সড়কের মাঝামাঝি অংশ বন্ধ করে তিনটি নতুন আন্ডারপাস নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে সরু হয়ে গেছে চলাচলের পথ। ঈদে যাত্রী বেড়ে গেলে তাই যানজট হবে।’
সার্বিক বিষয়ে সড়ক পরিবহন সেতু বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘এবার রাস্তা ভালো। ২৬টি তদারকদল কাজ করছে। তবে সব সংস্থার সমন্বয় যানজট নিরসনের জন্য জরুরি। তিনি বলেন, পোশাক কারখানাগুলোয় ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ার প্রস্তাব আমরা বহু আগে থেকেই করে আসছি।’