ঈশ্বরদী: দাম নেই ধানের। তাই আগুন দেওয়া হয়েছে ক্ষেতে। আর চাহিদা ও বিক্রয় না হওয়ায় এবার পাবনার ঈশ্বরদীতে মাঠে মাঠে লাঙ্গল দিয়ে বিনষ্ট করা হচ্ছে শীতকালীন সবজি মুলার ক্ষেত।
গত বৃহস্পতিবার উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা পদ্মাচর, কামালপুর, সলিমপুরের ভাড়ইমারি, জগনাথপুর মাঠ ঘুরে মুলার ক্ষেতে লাঙ্গল দিয়ে নষ্ট করার চিত্র চোখে পড়ে।
বিভিন্ন সূত্রে জানায় যায়, স্থানীয় ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মুলার চাহিদা নেই। সামান্য পরিমান চাহিদা ঢাকার বাজারে থাকলেও দাম খুবই কম। আর এই দাম মাঠ থেকে মুলা উত্তোলন করে বাজারজাত করার খরচের তুলনায় অনেক কম।
উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের ভাইড়মারী সরদার পাড়ার মাঠে মুলার ক্ষেতে লাঙ্গল দিয়ে ক্ষেত বিনষ্টকারী চাষী শামসুল সরদার, দুলাল প্রামানিক, আশাদুল খাঁন, পলাশ হোসেন ও মুরাদ প্রামানিক জানান, বাজারে মুলার দাম ও চাহিদা না থাকায় বিক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের তুলনায় মুলা বেশি দিন মাঠে থাকায় অনেক মাঠের মুলা মোটা হয়ে ফুল এসে যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বাজারে মুলার চাহিদা না থাকায় এসব মুলা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। তাছাড়া অনেকেই অন্যের নিকট থেকে জমি খাজনা (লিজ) নিয়ে মুলা চাষ করেছেন। লীজের সময় অতিক্রম হয়ে গেছে। কিন্তু মুলা বিক্রয় হচ্ছে না। মুলা তুলে মাঠ পরিষ্কার করে দেয়া হচ্ছে।
লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের পদ্মানদীর চরে, কামালপুর, চরমাদিরার চরের মুলাাচাষী মাহাতাব উদ্দিন, শিহাব, সুজন ও মনিরুল ইসলাম জানান, মুলা শীতকালীন সবজি। সবজি মৌসুমে প্রতি বিঘা জমির মুলার ব্যাপারীদের নিকট তাঁরা ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রয় করেছেন। পরে নাবি মুলা যা এখন মাঠে রয়েছে। এই মুলার চাহিদা এখন আর নেই। বড় ব্যবসায়ীরা আর মুলা কিনছে না। স্থানীয় বাজারেও মুলার দাম নেই। তারা আরও জানান, এই মুলা উৎপাদন করতে বিঘা প্রতি তাঁদের ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
মাঠ ধরে মুলা ক্রেতা বিপুল, জনি ও আজাদ জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা মুলা বাজারজাত করেন। কিন্তু বর্তমানে মুলার দাম নেই। চাহিদা না থাকার কারণেই মুলত দাম নেই। ঢাকার বাজারে মুলার দাম প্রতি কেজি ৭ থেকে ১০ টাকা। স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি খুচরা ৩ থেকে ৫ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে। এই দামে মাঠ থেকে মুলা কিনে উত্তোলন ও পরিষ্কার করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করে ব্যাপকহারে লোকসান গুনতে হচ্ছে। অনেক সময় বিক্রয় না হওয়ায় তা গাড়ি ভাড়া করে মজুরি দিয়ে বাইরে ফেলে আসতে হচ্ছে। তাই আর মুলা কেনা হচ্ছে না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে, মুলা আসলে শীত কালিন সবজি। চাষিরা এটাকে খরিদ-১ (গরমকালে) উৎপাদন করার কারণেই এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ঈশ্বরদী একটি সবজি প্রধান অঞ্চল হলেও এখানে সবজি সংরক্ষণের জন্য কোন কোল্ড স্টোর নেই। এই কারণে প্রতি বছরই এই অঞ্চলের সবজি চাষি, লিচু চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল লতিফ জানান, শীতকালীন মৌসুমে মুলা চাষ করে কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। এখন মুলার মৌসুম নয়। তারপরও ঈশ্বরদীতে প্রচুর পরিমাণে মুলা উৎপাদন হয়েছে। আর চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজার মুল্য পড়ে গেছে। তিনি আরও জানান, এবার ঈশ্বরদীতে মোট ৪৬০ হেক্টর জমিতে মুলা চাষ করা হয়েছিল।
মন্তব্য