হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের ঐতিহ্যবাহী মহেন্দ্রনগর রেলস্টেশনের কার্যক্রম দীর্ঘদিন হতে বন্ধ থাকায় যাত্রী সাধারণ হয়রানীর ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। গুনতে হচ্ছে টিকিটের নামে অতিরিক্ত ভাড়া।
জানা গেছে, তিন্তা নদীর পূর্ব পাড় থেকে মোগলহাট পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে রেল চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে লালমনিরহাটে রেলের ১ম পদাপর্ন ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে।
ধীরে ধীরে লালমনিরহাট পরিণত হয় ব্যস্ততম রেল জংশন এবং এখানে স্থাপিত হয় রেলওয়ে বিভাগীয় দপ্তর।
মূলত রেলওয়ের কারণেই লালমনিরহাট ব্রিটিশ ভারতে প্রসিদ্ধ লাভ করেছিল।
লালমনিরহাট রেল বিভাগের বিস্তৃতি কাল হচ্ছে পঞ্চগড় রেল স্টেশন থেকে কাঞ্চন জংশন, সেখান থেকে একটি শাখা লাইন বিরল স্টেশন হয়ে বর্তমান ভারতের বিহার রাজ্যের কাঠিহার জংশন, সেখান থেকে একটি শাখা সৈয়দপুর স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত।
পার্বতীপুর জংশন থেকে কাউনিয়া জংশন, সেখান থেকে একটি শাখা ত্রিমোহনী জংশন পর্যন্ত এবং অপর একটি শাখা তিস্তা জংশন পর্যন্ত বিস্তৃতি।
ত্রিমোহনী জংশন থেকে একটি শাখা বালাশিঘাট পর্যন্ত এবং অপর একটি শাখা বোনারপাড়া জংশন পর্যন্ত বিস্তৃত, বোনারপাড়া জংশন থেকে একটি শাখা তিস্তা মুখ ঘাট পর্যন্ত এবং অপর একটি শাখা সান্তাহার পর্যন্ত বিস্তৃত, তিস্তা জংশন থেকে একটি শাখা চিলমারী বন্দর পর্যন্ত এবং অপর একটি শাখা লালমনিরহাট জংশন পর্যন্ত বিস্তৃত।
লালমনিরহাট জংশন থেকে একটি শাখা বুড়িমাড়ী স্টেশন পর্যন্ত এবং অপর একটি শাখা মোগলহাট স্টেশন হয়ে বর্তমান ভারতের গিতালদহ স্টেশন পেরিয়ে গোলকগঞ্জ জংশনের মধ্যদিয়ে রংদিয়া জংশন হয়ে আসামের আমিনগাও স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত।
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা হচ্ছে পার্বতীপুর থেকে পূর্বদিক অর্থাৎ রংপুরের দিকে রেল লাইন নির্মাণ শুরু হয় এবং শ্যামপুর পর্যন্ত (১৫.৭৭ মাইল) রেলগাড়ী চলাচল আরম্ভ করে ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে।
রংপুর স্টেশন রেলগাড়ী এসে পৌঁছে ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুলাই। আরোও পূর্বদিকে এগিয়ে মিরবাগ তৎকালীন (ভুতছাড়া) স্টেশন পার হয়ে কাউনিয়া স্টেশনে পৌঁছে ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১ জুন।
সামনে তিস্তা (ত্রি স্রোত) নদী। এ নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রয়োজন হওয়ায় রেল লাইন সম্প্রসারণ স্থগিত হয়ে যায়।
এসময় উত্তরাঞ্চলের দুর্ভিক্ষের প্রক্ষোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় তদান্তীন বাংলার প্রাদেশিক সরকার চরম বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করে ন্যারোগেজ রেললাইন (আড়াই ফুট) নির্মাণ করেছিলেন। যার পরিচিতি ছিল কাউনিয়া ধরলা রেলওয়ে নামে।
কাউনিয়া থেকে তিস্তা নদীর পশ্চিমপাড় পর্যন্ত এবং তিস্তা নদীর পূর্ব পাড় থেকে মোগলহাট ও তিস্তা জংশন থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত এ রেলপথ প্রাথমিকভাবে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে চালু হলেও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছিল ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারী।
তিস্তা নদী পারাপারের জন্য ফেরীর ব্যবস্থা ছিল। পরবর্তীতে ১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে তিস্তা নদীর উপর রেলসেতু নির্মিত হলে কাউনিয়া থেকে মোগলহাট (১৬.১৪ মাইল) রেলপথ ন্যারোগেজ থেকে মিটার গেজে রূপান্তরিত হয় এবং তা ১৯০১ খিস্টাব্দে ১ এপ্রিল ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে অন্তর্ভূক্ত হয়।
মোগলহাট স্টেশনের উদ্বোধন হয় ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ৩৮.১৫ একর জমি হুকুম দখল করে লালমনিরহাট রেলওয়ে জংশন স্টেশনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে এবং জংশন স্টেশনটি উদ্বোধন করা হয় ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে। এরপর ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে মহেন্দ্রনগর স্টেশনটি উদ্বোধন করা হয়।
সেই থেকে মহেন্দ্রনহর রেলস্টেশনটি ঐতিহ্যবাহী স্টেশন হিসেবে বহন করে আসলেও এ জনবহুল এলাকায় অবস্থিত এ স্টেশনটির কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় এখানকার যাত্রী সাধারণের হয়রানীর যেন শেষ নেই। স্টেশনে টিকিট না পেয়ে ট্রেনে টিকিট চাইতে গিয়ে অতিরিক্ত জরিমানা গুণতে হয় যাত্রীদের।
লালমনিরহাট রেল বিভাগের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান জনবল সংকটের কারণে মহেন্দ্রনগর রেল স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
কবে নাগাদ চালু করা হবে ওই কর্মকর্তা সুনিশ্চিত করে কোন সময় সীমা জানাতে পারেনি।